চুল পড়ার কারণ । চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
চুল পড়ার কারণ । চুল পড়া বন্ধ করার উপায় : চুল পড়া থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায়- এমন প্রশ্ন আজকাল সবার মুখেমুখে । বালিশের কভার, বাথরুমের সিঙ্ক, ঘরের মেঝে এমনকি চিরুনীতেও অসংখ্য ঝরে পড়া চুল দেখে প্রতিনিয়ত আতকে উঠতে হয়। চুল পড়ে মাথা টাক হয়ে যাবার ভয় বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি অন্যতম চিন্তার কারণ ।
আজকে আমরা ঘরে বসে চুল পড়া বন্ধ করার দারুণ কার্যকরী কিছু টিপস জানবো। আপনি যদি আপনার চুলের গুণগত মান উন্নত করতে চান এবং রাসায়নিক সমাধান দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে আপনার দূরত্ব বজায় রাখতে চান তাহলে চুল পড়া বন্ধ করার জন্য অবশ্যই ঘরোয়া প্রতিকার বেছে নিন ।
চুল পড়ার কারণ । চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
চুল পড়ার কারণ
চুল পড়া বন্ধ করার উপায় জানার আগে আপনাকে জানতে হবে কি কি কারণে চুল পড়ে থাকে । এখানে আমরা ৭টি কারণ উল্লেখ করবো যে কারণগুলো বেশিরভাগ মানুষের চুল পড়ার জন্য দায়ী।
১। দূষণ : বর্তমানে সর্বত্রই চলছে দূষণের ছড়াছড়ি। ধুলো-ময়লা, ধোয়া, দুর্গন্ধময় পরিবেশ চুলের ওপর ব্যপক প্রভাব ফেলে যার ফলে চুলের ক্ষতি হয় এবং চুল পড়ে।
২। বংশগত : আপনার পরিবারের বয়ষ্কদের চুলের ইতিহাস দেখুন। বংশগতভাবে তারা যদি টাক হয়ে থাকে তাহলে আপনারও এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
৩। চাপ : নিয়মিত পরিশ্রম ও ব্যায়াম করুন। তবে স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় কখনো আপোস করবেন না । পরিমিত খাবার গ্রহণ ও সঠিক সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। অত্যাধিক শারীরিক ও মানসিক চাপ চুল পড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
৪। পুষ্টির ঘাটতি : ভিটামিন, খনিজ ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারের অভাবে শরীরের সেল বা কোশগুলো রুগ্ন হয়ে পড়ে । এতে শরীর যেমন দূর্বল হয় তেমনি চুলের স্বাস্থ্যেরও ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়।
৫। হরমোনের পরিবর্তন : দৈনন্দিন জীবনধারার কিছু পর্যায় এমন রয়েছে যার কারণে চুল পড়তে পার। যেমন- বয়ঃসন্ধিতে প্রবেশ, গর্ভধারণ, ঋতুজরা, জন্মবিরতিকরণ পিল সেবন ইত্যাদি । এসব কারণে কারো কারো চুল পড়তে পারে।
৬। রোগ ও ওষুধ : ক্যান্সার, থাইরয়েড, আর্থ্রাইটিস ও হার্টের সমস্যাগুলোর মতো কিছু ধারাবাহিক রোগ চুল পড়ার কারণ হতে পারে। কিছু ওষুধ যেমন – অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ইত্যাদি চুল পড়ার কারণ হতে পারে। এসব ওষুধ গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শকৃত ডোজ কঠোরভাবে পালন করা আবশ্যক।
৭। অতিমাত্রার হেয়ারস্টাইল : চুলে অতিমাত্রার তেল , হেয়ার লোশন, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার ইত্যাদির লাগামহীন ব্যবহার চুল পড়ার একটি বিশেষ কারণ ।
ভগ্নাংশ কাকে বলে ? ভগ্নাংশ কত প্রকার ? বিস্তারিত
চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
চুল পড়া বন্ধ করার উপায় গুলো খুব ভালো করে জেনে নিন। কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে সহজেই চুল পড়া বন্ধ করতে পারেন। শুধু চুল পড়া বন্ধ নয় বরং চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার উপায় গুলো জানতে পারবেন এখানে । আসুন আমরা চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় গুলো জেনে নিই –
১। ডিমের হেয়ার মাস্ক : প্রোটিন, সালফার, জিঙ্ক এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ ডিম ক্রমাগত চুল পড়া বন্ধ করার জন্য একটি দুর্দান্ত প্রতিকার । ডিম চুলের গোড়া মজবুত করে, চুলের বৃদ্ধি বাড়ায় এবং চুলের ফেটে যাওয়া রোধ করে। ডিমের দুর্গন্ধ সহ্য করে আপনি এই ডিমের হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে পারলে চমৎকার চুল পেতে পারেন। ডিমের হেয়ার মাস্ক কীভাবে তৈরি করবেন ?
ডিমের হেয়ার মাস্ক তৈরির নিয়ম : ১টি ডিমের সাথে ১ চা চামচ মধু ও অলিভ অয়েল ভালো মতো মিশিয়ে নিন। এরপর একটি ব্রশের সাহায্যে চুলের গোড়ায় গোড়ায় মাখিয়ে দিন। ২০/২৫ মিনিট পর হালকা শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে একবার ডিমের হেয়ার মাস্ক চুলে প্রয়োগ করুন।
২। নারকেল তেল ব্যবহার করুন : বাজারের কেমিক্যালযুক্ত নানান ধরনের তেলের বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ না হয়ে চুলে নারকেল তেল ব্যবহার করুন। নারকেল তেলের ফ্যাটি এসিড চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
২-৩ চা চামচ নারকেল তেল হালকা গরম করে মাথার ত্বকে লাগান এবং আলতোভাবে ম্যাসেজ করুন। পরদিন হালকা শ্যাম্পু করে চুল দুয়ে ফেলুন।
৩। আমলকি ও লেবুর রস : আমলকি ও লেবুর রস চুল মজবুত করাতে এবং অকালে চুল পাকা রোধ করার জন্য একটি শক্তিশালী আয়ুর্বেদিক সমাধান। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ আমলকি ও লেবুর রস চুলের বৃদ্ধিকে তরান্বিত করে।
আমলকি ও লেবুর রস কীভাবে ব্যবহার করবেন :
১ চা চামচ আমলকি পাউডার ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন। মাথার ত্বকে প্রয়োগ করে ৩০-৩৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে এক বা দুইবার ব্যবহার করুন।
ইসলাম জীবের প্রতি দয়া সম্পর্কে কী বলে ?
৪। মেথি : মেথি ক্ষতিগ্রস্থ চুলের ফলিকল মেরামত করতে এবং স্বাস্থ্যকর চুলের বৃদ্ধির জন্য একটি কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার। এর উচ্চ প্রোটিন উপাদান চুলের প্রাকৃতিক পুষ্টি জোগায় এবং চুলকে খুশকিমুক্ত রাখে।
মেথি কীভাবে ব্যবহার করবেন : দু চা চামচ মেথি সারার রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে পিষে পেস্ট তৈরি করুন। ৩০-৪০ মিনিট মাথার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। এরপর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে এক বা দুইবার ব্যবহার করুন।
৫। গ্রিন টি :প্রতিদিন সকালে এক কাপ গ্রিন টি আপনার মনকে সতেজ করতে এবং শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। তবে গ্রিন টির একটি চমৎকার উপকারিতা হচ্ছে একটি চুল পড়া বন্ধ করতে এবং চুলের প্রাকৃতিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
গ্রিন টি কীভাবে ব্যবহার করবেন : এক কাপ গরম পানিতে ১-২টি টি ব্যাগ ৫/৭ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। মিশ্রনটি ঠান্ডা হলে চুল ও মাথার ত্বকে ভালো করে মেখে নিন। এর ১ ঘণ্টা পরে এরপর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে এক বা দুইবার ব্যবহার করুন।
৬। এ্যালোভেরা : চুলের খুশকি দূর করতে ও চুল পড়া রোধ করতে এ্যালোভেরার জুড়ি নেই। এই কুলিং প্ল্যান্ট মাথা ঠাণ্ডা রাখে, চুল পড়া রোধ করে এবং অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ করে অবরুদ্ধ চুলের ফলিকগুলোকে মুক্ত করে।
এ্যালোভেরা কীভাবে ব্যবহার করবেন : এ্যালোভেরা জেল হাতে নিয়ে সরাসরি মাথার ত্বকে ব্যবহার করুন। এর ১ ঘণ্টা পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে এক বা দুইবার ব্যবহার করুন।
শহীদ মিনার-জাতীয় পতাকা ও স্মৃতিসৌধ অংকন পদ্ধতি
৭। পেঁয়াজ : চুল পড়া রোধে পেঁয়াজের ব্যাপক সাফল্য রয়েছে। কিছুটা গন্ধ ও ঝাঁঝ সহ্য করার সক্ষমতা থাকলে চুল পড়া রোধে নির্দিধায় পেঁয়াজ ব্যবহার করুন।
পেঁয়াজ কীভাবে ব্যবহার করবেন : পেঁয়াজ পিষে রস বের করুন। একটি তুলোর টুকরা তেলে চুবিয়ে মাথার ত্বকে ঘষুন। এর ৩০ মিনিট পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে এক বা দুইবার ব্যবহার করুন।
পরিশেষে চুল পড়া রোধ করতে হলে দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকা জরুরী । তাই পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে গুরুত্ব প্রদান করত হবে। বিশেষতঃ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া চাই। চুল পড়া বন্ধ করার উপায় উইকিপিডিয়া থেকেও জানতে পারেন। ধন্যবাদ।