আল মাহমুদের কবিতা : সেরা পাঁচটি কবিতা
আল মাহমুদের কবিতা । কবি আল মাহমুদের আসাধারণ কবিতাসমগ্রের মধ্য থেকে বাছাই করা পাঁচটি কবিতা নিয়ে আমাদের আজকের এই পোস্ট। আসুন আমরা কবি আল মাহমুদের কবিতা র ভান্ডার থেকে সেরা পাঁচটি কবিতা পড়ি :

আল মাহমুদের কবিতা : সেরা পাঁচটি কবিতা
পাখির কাছে ফুলের কাছে
নারকেলের ঐ লম্বা মাথায় হঠাৎ দেখি কাল
ডাবের মতো চাঁদ উঠেছে ঠান্ডা ও গোলগাল ।
ছিটকিনিটা আস্তে খুলে পেরিয়ে গেলাম ঘর
ঝিমধরা এই মস্ত শহর কাঁপছিলো থরথর ।
মিনারটাকে দেখছি যেন দাঁড়িয়ে আছেন কেউ,
পাথরঘাটার গির্জেটা কি লাল পাথরের ঢেউ?
দরগাতলা পার হয়ে যেই মোড় ফিরেছি বায়
কোত্থেকে এক উটকো পাহাড় ডাক দিলো আয় আয় ।
পাহাড়টাকে হাত বুলিয়ে লালদিঘির ঐ পাড়
এগিয়ে দেখি জোনাকিদের বসেছে দরবার ।
আমায় দেখে কলকলিয়ে দিঘির কালো জল
বললো, এসো, আমরা সবাই না-ঘুমানোর দল-
পকেট থেকে খোলো তোমার পদ্য লেখার ভাঁজ
রক্তজবার ঝোঁপের কাছে কাব্য হবে আজ ।
দিঘির কথায় উঠল হেসে ফুল পাখিরা সব
কাব্য হবে, কাব্য কবে — জুড়লো কলরব।
কী আর করি পকেট থেকে খুলে ছড়ার বই
পাখির কাছে, ফুলের কাছে মনের কথা কই ।
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম
নোলক
আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে ।
নদীর কাছে গিয়েছিলাম, আছে তুমার কাছে ? –
হাত দিও না আমার শরীর ভরা বোয়াল মাছে ।
বললো কেঁদে তিতাস নদী হরিণবেড়ের বাঁকে
শাদা পালক বকরা যেথায় পাখ ছাড়িয়ে থাকে ।
জল ছাড়িয়ে দল হারিয়ে গেলাম বনের দিক
সবুজ বনের হরিৎ টিয়ে করে রে ঝিকমিক
বনের কাছে এই মিনতি, ফিরিয়ে দেবে ভাই,
আমার মায়ের গয়না নিয়ে ঘরকে যেতে চাই ।
কোথায় পাবো তোমার মায়ের হারিয়ে যাওয়া ধন
আমরা তো সব পাখপাখালি বনের সাধারণ ।
সবুজ চুলে ফুল পিন্দেছি নোলক পরি না তো !
ফুলের গন্ধ চাও যদি নাও, হাত পাতো হাত পাতো-
বলে পাহাড় দেখায় তাহার আহার ভরা বুক ।
হাজার হরিণ পাতার ফাঁকে বাঁকিয়ে রাখে মুখ ।
এলিয়ে খোঁপা রাত্রি এলেন, ফের বাড়ালাম পা
আমার মায়ের গয়না ছাড়া ঘরকে যাবো না ।
যতিচিহ্ন কাকে বলে ? যতিচিহ্ন কয়টি ও কী কী ?
একুশের কবিতা
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
দুপুর বেলার অক্ত
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায়?
বরকতের রক্ত।
হাজার যুগের সূর্যতাপে
জ্বলবে এমন লাল যে,
সেই লোহিতেই লাল হয়েছে
কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে !
প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে
ছড়াও ফুলের বন্যা
বিষাদগীতি গাইছে পথে
তিতুমীরের কন্যা।
চিনতে না কি সোনার ছেলে
ক্ষুদিরামকে চিনতে?
রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিলো যে
মুক্ত বাতাস কিনতে ?
পাহাড়তলীর মরণ চূড়ায়
ঝাঁপ দিল যে অগ্নি,
ফেব্রুয়ারির শোকের বসন
পরলো তারই ভগ্নী।
প্রভাতফেরী, প্রভাতফেরী
আমায় নেবে সঙ্গে,
বাংলা আমার বচন, আমি
জন্মেছি এই বঙ্গে।
ভর দুপুরে
মেঘনা নদীর শান্ত মেয়ে তিতাসে
মেঘের মত পাল উড়িয়ে কী ভাসে!
মাছের মত দেখতে এ কোন পাটুনি
ভর দুপুরে খাটছে সখের খাটুনি।
ওমা এ-যে কাজল বিলের বোয়ালে
পালের দড়ি আটকে আছে চোয়ালে
আসছে ধেয়ে লম্বা দাড়ি নাড়িয়ে,
ঢেউয়ের বাড়ি নাওয়ের সারি ছাড়িয়ে
কোথায় যাবে কোন উজানে ও-মাঝি
আমার কোলে খোকন নামের যে-পাজি
হাসেছ, তারে নাও না তোমার নায়েতে
গাঙ-শুশুকের স্বপ্নভরা গাঁয়েতে;
সেথায় নাকি শালুক পাতার চাদরে
জলপিপিরা ঘুমায় মহা আদরে,
শাপলা ফুলের শীতল সবুজ পালিশে
থাকবে খোকন ঘুমিয়ে ফুলের বালিশে।
পাখির মতো
আম্মা বলেন, পড়রে সোনা
আব্বা বলেন, মন দে;
পাঠে আমার মন বসে না
কাঁঠালচাঁপার গন্ধে।
আমার কেবল ইচ্ছে জাগে
নদীর কাছে থাকতে,
বকুল ডালে লুকিয়ে থেকে
পাখির মতো ডাকতে।
সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
কর্ণফুলীর কূলটায়,
দুধভরা ঐ চাঁদের বাটি
ফেরেস্তারা উল্টায়।
তখন কেবল ভাবতে থাকি
কেমন করে উড়বো,
কেমন করে শহর ছেড়ে
সবুজ গাঁয়ে ঘুরবো।
তোমরা যখন শিখছো পড়া
মানুষ হওয়ার জন্য,
আমি না হয় পাখিই হবো,
পাখির মতো বন্য।



