সমসাময়িক

কবুতর পালন পদ্ধতি । চিকিৎসা ও লাভ

কবুতর পালন পদ্ধতি । চিকিৎসা ও লাভ : কবুতর আমাদের অতিপরিচিত গৃহপালিত পাখি । বাংলাদেশের গ্রামে এমনকি শহর এলাকায়ও অনেককে কবুতর পালন করতে দেখা যায় । আমরা সাধারণত গৃহপালিত পাখির ডিম ও মাংস উভয়ই খেয়ে থাকি কিন্তু কবুতরের ডিম খাওয়া হয় না, শুধু মাংস খাওয়া হয় । বিশেষ করে ৩-৪ সপ্তাহ বয়সের বাচ্চা কবুতরের মাংস খাওয়া হয় । কবুতরের মাংস খুব নরম ।

কবুতর পালন পদ্ধতি । চিকিৎসা ও লাভ

কবুতরের জাত

পৃথিবীতে অনেক জাতের কুবতর রয়েছে। মাংস উৎপাদনের জন্য হোয়াইট কিং, সিলভার কিং, কারনাউ ও হোমার বিশ্ববিখ্যাত । চিত্তবিনোদনের জন্য লাহোরি, ফ্যানটেইল, সিরাজি, গিরিবাজ, ময়ূরপঙ্খি ইত্যাদি জাতের কবুতর রয়েছে । দেশি কবুতরের মধ্যে জালালি, গোলা, গোলি, ডাউকা, লোটন, মুক্কি ইত্যাদি জাত দেখা যায় ।

বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন

বাংলাদেশে বাণিজ্যিক কবুতরের খামার তেমন দেখা যায় না। এ দেশে অনেকে চিত্তবিনোদন ও শখের বশে কবুতর পালন করে থাকে। এতে চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি কবুতরের বাচ্চা তাদের পারিবারিক মাংসের চাহিদা পূরণ করে ।

একটি পুরুষ ও স্ত্রী কবুতর জোড়ায় জোড়ায় বসবাস করে । কবুতর ৫-৬ মাস বয়সে ২৮ দিন অন্তর ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দুইটি ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার সময় হলে এরা উভয়ই খড়-কুটা টেনে বাসায় তোলে । ডিম পাড়ার পর উভয়ই পালাক্রমে ডিমে তা দেয় । কবুতরের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ১৮ দিন সময় লাগে ।

কবুতর পালন খুব আনন্দদায়ক । কবুতরের মাংস সুস্বাদু ও পুষ্টিকর । কবুতর থেকে বছরে ৭-৮ জোড়া বাচ্চা পাওয়া যায় । কবুতরের বাচ্চা ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যেই খাবার উপযোগী হয়। কবুতর পালনে খরচ কম । স্বল্প পুঁজিতে কবুতর পালন করা যায় । এদের রোগবালাই কম হয় ।

কবুতর পালন পদ্ধতি

বহুকাল আগে থেকে মানুষ মুক্ত পদ্ধতিতে কবুতর পালন করে আসছে । কিন্তু বর্তমানে অনেকে অর্ধ-আবদ্ধ ও আবদ্ধ পদ্ধতিতে কবুতর পালন করছে । আমাদের দেশে সাধারণত মুক্ত অবস্থায় কবুতর পালন করা হয় । আবার অনেককে তারের জাল দিয়ে ঘিরে অথবা বড় আবদ্ধ ঘরে কবুতর পালন করতে দেখা যায় ।

মহানবীর (সা.) জন্ম ও এক ইহুদির ভবিষ্যদ্বাণী

১। মুক্ত পদ্ধতিতে পালন : সকালে কবুতরকে বাসা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। দিনের বেলায় খাদ্যের খোঁজে এরা বিভিন্ন জায়গায় উড়ে বেড়ায়। মাঝেমধ্যে বাড়ি এসে বিশ্রাম নিয়ে আবার চলে যায়। তবে সন্ধ্যার আগেই এরা বাড়ি চলে আসে। এ অবস্থায় সাধারণত কবুতরকে কোনো খাদ্য সরবরাহ করা হয় না । কিন্তু কবুতর সবসময় মাঠ থেকে পরিমাণ মতো খাবার পায় না। তাই মুক্ত পদ্ধতিতে পালন করা কবুতরকে বাড়িতে নিয়মিত কিছু খাবার সরবরাহ করলে ভালো বাচ্চা পাওয়া যায় ।

স্ত্রী ও পুরুষ কবুতর উভয়ই পালাক্রমে বাচ্চাকে খাওয়ায় । এরা বাচ্চার মুখের ভিতর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে আদরের সাথে নিজ খাদ্যথলির রসমিশ্রিত নরম খাদ্য বাচ্চার মুখের ভিতর দেয় । এ রসমিশ্রিত নরম খাদ্য অত্যন্ত পুষ্টিকর হওয়ায় তা খেয়ে বাচ্চা দ্রুত বেড়ে উঠে। ২৮ দিন পর এদের পাখার পালক গজায় । এবং এরা ঠোঁট দিয়ে তুলে খেতে পারে ।

শহীদ মিনার-জাতীয় পতাকা ও স্মৃতিসৌধ অংকন পদ্ধতি

২। আবদ্ধ পদ্ধতিতে পালন : আবদ্ধ অবস্থায় বড় ঘরের মধ্যে কবুতর পালন করা হয়। এ অবস্থায় কবুতরের ঘরে যেন প্রচুর আলো-বাতাস ঢুকতে পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে । এখানে ঘরের মধ্যে কবুতরকে বাসা বা খোপ তৈরি করে দেওয়া হয় । তাছাড়া ঘরের মধ্যে কবুতরের জন্য খাদ্য ও পানির পাত্রের ব্যবস্থা করতে হয় । বৃষ্টির পানি যাতে ঘরে না আসে, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। ঘরের মধ্যে কবুতর যাতে উড়তে পারে, সেদিকে লক্ষ রেখে বসার ব্যবস্থা করে দিতে হবে । তবে যে পদ্ধতিতেই কবুতর পালন করা হোক না কেন, খড়-কুটা টেনে বাসায় তোলা, ডিম পাড়া এবং ডিমে তা দেওয়ার সময় এদের বিরক্ত করা যাবে না ।

৩। অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে পালন : অর্ধ-আবদ্ধ অবস্থায় কবুতর পালন করলে বহুতল বাসা তৈরিতে খরচ কম হয় । কবুতরকে হিসাব করে অর্ধেক খাবার বাড়িতে সরবরাহ করতে হয় । অবশিষ্ট খাদ্য এরা মুক্ত অবস্থার মতো নিজেরা সংগ্রহ করে খায় ।

কবুতরের বাসস্থান ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা

কবুতরের বাসস্থান : কবুতর একক বাসা বা খোপের মধ্যে বসবাস করতে পছন্দ করে। কবুতরের বাসা মাটি থেকে উঁচুতে স্থাপন করতে হয়। বন্য পশু-পাখি যাতে এদের ক্ষতি করতে না পারে, সে দিকে লক্ষ রেখে বাসা তৈরি করতে হয় । কাঠ, পাতলা টিন, বাঁশ বা প্যাকিং কাঠ দিয়ে কবুতরের বাসা বা খোপ তৈরি করা হয় । কবুতর থেকে বেশি বাচ্চা পেতে হলে এক জোড়ার জন্য পাশাপাশি ২টি বাসা তৈরি করতে হবে । কারণ বাচ্চা পালনের সময় আবার ডিম পাড়ার সময় হলে সে বাচ্চার পাশের বাসায় নতুন করে ডিম দেয় এবং তা দিতে শুরু করে। কবুতরের ঘর দুই বা ততোধিক তলা বিশিষ্টও হতে পারে। বহুতল বাসা তৈরিতে খরচ কম হয় ।

স্ত্রী ও পুরুষ কবুতর উভয়ই পালাক্রমে বাচ্চাকে খাওয়ায় । এরা বাচ্চার মুখের ভিতর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে আদরের সাথে নিজ খাদ্যথলির রসমিশ্রিত নরম খাদ্য বাচ্চার মুখের ভিতর দেয় । এ রসমিশ্রিত নরম খাদ্য অত্যন্ত পুষ্টিকর হওয়ায় তা খেয়ে বাচ্চা দ্রুত বেড়ে উঠে। ২৮ দিন পর এদের পাখার পালক গজায় । এবং এরা ঠোঁট দিয়ে তুলে খেতে পারে ।

বাছাইকৃত সেরা ৫০ টি ইসলামিক উক্তি ও মণীষীদের বাণী

বয়স্ক কবুতরের খাদ্য : কবুতর ধান, গম, ভুট্টা, মটর, খেসারি, সরিষা, কলাই ইত্যাদি শস্যদানা খেতে পছন্দ করে। মুরগির জন্য তৈরি সুষম খাবারও কবুতরকে খাওয়ানো যায় । প্রতিটি কবুতর গড়ে দৈনিক ৫০ গ্রাম খাবার খেয়ে থাকে । কবুতরকে ঝিনুকের খোসাচূর্ণ, চুনাপাথর, কাঠকয়লা চূর্ণ, লবণ ইত্যাদি একত্রে মিশিয়ে খেতে দিতে হয়। এতে তাদের খনিজ লবণের অভাব পূরণ হয়। কবুতরের খাদ্য ও পানি পাত্রে সরবরাহ করতে হয় । মুক্ত ও অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে কবুতর নিজেই খাদ্যের সন্ধানে বের হয়ে যায় । এরা বিভিন্ন ফসলের মাঠ হতে খাদ্য খেয়ে থাকে । ঘরে কবুতরকে তৈরি খাদ্য সরবরাহ করা হয় ।

পানি সরবরাহ : কবুতরের পানি পান ও গোসল করার জন্য ঘরের মাঝখানে ২-৩টি গামলার ব্যবস্থা করতে হবে । গামলার ৩-৪ ভাগ পানি দিয়ে ভরে রাখতে হবে। এখান থেকেই এরা পানি পান ও গোসল করবে ।

কবুতর পালন পদ্ধতি জেনে বাড়িতে কবুতর পালন করে মাংসের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থিকভাবেও লাভবান হওয়া যায়।

Samim Ahmed

Hey! I'm Samim Ahmed (Admin of ShikhiBD). I love to write and read on the topic of current affairs. Since my childhood; I have been an expert in writing feature posts for various magazines.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *