![টমেটো চাষ পদ্ধতি । রোগ ও প্রতিকার](https://shikhibd.com/wp-content/uploads/2024/09/টমেটো-চাষ-পদ্ধতি.png)
টমেটো চাষ পদ্ধতি । রোগ ও প্রতিকার : টমেটো ভিটামিন এ, বি এবং সি সমৃদ্ধ একটি সবজি । কাঁচা ও পাকা টমেটো রান্না এবং পাকা টমেটো সালাদ হিসাবে জনপ্রিয় । তাছাড়া পাকা টমেটো প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি সস রুচিবর্ধক। টমেটো মূলত শীতকালীন সবজি । তবে বর্তমানে গ্রীষ্মেও চাষ করা যায় । তবে সঠিকভাবে টমেটো চাষ পদ্ধতি । রোগ ও প্রতিকার জেনে টমেটো চাষ করতে হবে।
টমেটো চাষ পদ্ধতি । রোগ ও প্রতিকার
টমেটোর জাত : বাংলাদেশে টমেটোর অনেক অনুমোদিত জাত রয়েছে। শীতকালীন জাতের মধ্যে রয়েছে – বারি টমেটো-২ (রতন), বারি টমেটো-৯ (লালিমা), বারি টমেটো-১০ (অনুপমা), বিনা টমেটো-৩ এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা জাত মারগ্লোব, রুমা ভিএফ, অক্সহার্ট ইত্যাদি । গ্রীষ্মকালীন জাতের মধ্যে রয়েছে- বারি টমেটো-৪, বারি টমেটো-৫, বারি টমেটো-৯ (লালিমা), বারি টমেটো-১০ (অনুপমা), বারি টমেটো-১১ (ঝুমকা), বারি হাইব্রিড টমেটো-৩, বারি হাইব্রিড টমেটো-৪ ইত্যাদি ।
টমেটো চাষ উপযোগী মাটির বৈশিষ্ট্য :
আলো-বাতাসযুক্ত উর্বর দোআঁশ মাটি টমেটো চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো । তবে উপযুক্ত পরিচর্যায় বেলে-দোআঁশ থেকে এঁটেল-দোআঁশ সব মাটিতেই টমেটো ভালো জন্মে ।
টমেটোর চারা উৎপাদন পদ্ধতি : প্রতি হেক্টরে টমেটো চাষের জন্য ২০০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন । প্রথমে ৪টি বীজতলায় (৩ মিটার × ১ মিটার) ৫০ গ্রাম করে বীজ ঘন করে বুনতে হয়। বীজ গজানোর ৮-১০ দিন পরে চারা তুলে দ্বিতীয় বীজতলায় ৪×৪ সেমি. দূরে দূরে রোপণ করতে হয় । সেক্ষেত্রে ২২টি বীজতলার প্রয়োজন হয় । এতে করে সবল চারা পাওয়া যায় । শীতকালীন জাতের জন্য সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ।
টমেটোর জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ :
৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে । মাটির প্রকৃতি ও স্থানভেদে ১ মিটার চওড়া ও ১৫-২০ সেমি. উঁচু বেড তৈরি করতে হবে। দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেমি. চওড়া সেচ নালা রাখতে হবে, যাতে পানিসেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধা হয়। টমেটো চাষের জন্য সার প্রয়োগের পরিমাণ হচ্ছে—
সারের নাম | সারের পরিমাণ / প্রতি শতক |
ইউরিয়া | ২.০-২.৫ কেজি |
টিএসপি | ১.৫-২.০ কেজি |
এমওপি | ০.৮-১.২ কেজি |
গোবর সার | ৩০-৫০ কেজি |
শেষ চাষের আগে সম্পূর্ণ গোবর, সব টিএসপি এবং তিন ভাগের দুই ভাগ এমওপি সার ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে । ইউরিয়া সার সমান ৩ কিস্তিতে চারা লাগানোর ১০ দিন, ২৫ দিন ও ৪০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে । বাকি এমওপি সার দুই ভাগে ভাগ করে ২৫ দিন ও ৪০ দিন পর দিতে হবে ।
টমেটোর চারা রোপণ : চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন হলে রোপণের উপযোগী হয় । বীজতলা থেকে চারা অত্যন্ত যত্ন সহকারে তুলতে হবে যেন চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এজন্য চারা তোলার আগে বীজতলার মাটি ভিজিয়ে নিতে হবে । বিকেলের পড়ন্ত রোদে চারা রোপণ করাই উত্তম । রোপণের পর হালকা সেচ দিতে হবে । এক মিটার চওড়া বেডে দুই সারি করে চারা লাগাতে হবে । সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেমি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪০ সেমি রাখতে হবে ।
টমেটোর আন্তঃপরিচর্যা : জমিকে নিয়মিত আগাছামুক্ত রাখতে হবে। চারা রোপণের প্রথম ৩-৪ দিন হালকা সেচ দিতে হবে। পরবর্তীকালে মাটিতে রসের অভাব হলে সেচ দিতে হবে। সেচ অথবা বৃষ্টির কারণে জমিতে অতিরিক্ত পানি জমলে তা বের করে দিতে হবে । প্রথম ফুলের গোছার ঠিক নিচের কুশিটি ছাড়া সব পার্শ্ব কুশি ছাঁটাই করতে হবে। গাছে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠেকনা দিতে হবে ।
মহানবীর সিরিয়া সফর ও পাদ্রী বাহীরার কাহিনী
টমেটো চাষ ও রোগ প্রতিরোধ
১। ড্যাম্পিং অফ রোগ : ছত্রাকজনিত এ রোগে চারার গোড়ায় পানি ভেজা দাগ পড়ে ও পচে যায় । অনেক সময় শিকড় পচেও চারা মারা যায় । আক্রান্ত জায়গায় রিডোমিল গোল্ড দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে ।
২। ঢলে পড়া রোগ : ব্যাকটেরিয়াজনিত এ রোগে গাছ যেকোনো সময় ঢলে পড়ে ও দ্রুত মারা যায় । আক্রান্ত গাছ দেখলেই তা তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে । রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ করতে হবে ।
৩। হলুদ পাতা কুঁকড়ানো রোগ : ভাইরাসজনিত এ রোগে পাতা কিনারা থেকে মধ্যশিরার দিকে গুটিয়ে যায় । পাতা খসখসে হয়ে শিরাগুলো স্বচ্ছ হলুদ হয়ে কুঁকড়িয়ে যায় । আক্রান্ত গাছের ডগায় ছোট ছোট পাতা গুচ্ছ আকার ধারণ করে । এ রোগ দমনের জন্য টমেটো ক্ষেত আগাছামুক্ত রাখতে হবে, রোগমুক্ত চারা লাগাতে হবে, আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
![টমেটো গাছের রোগ ও পোকা](https://shikhibd.com/wp-content/uploads/2024/09/টমেটো-গাছের-রোগ-ও-পোকা.png)
আগ্নেয়গিরি কি- আগ্নেয়গিরি কাকে বলে ? বিশ্বের জীবন্ত ১০টি আগ্নেয়গিরি
টমেটোর পোকা দমন
টমেটো গাছে এক ধরনের সাদা মাছি পোকার আক্রমন লক্ষ্য করা যায় । সাদা মাছি পোকা দমনের জন্য ৭-১০ দিন পর পর এডমায়ার নামক কীটনাশক স্প্রে করতে হবে ।
টমেটো সংগ্রহ : সাধারণত চারা রোপণের দুই মাস পর হতে টমেটো পাকা শুরু করে । জাতভেদে টমেটোর জীবনকাল ১২০-১৫০ দিন । ফল লালচে রং ধারণ করলে বোঁটা থেকে কেটে ফল সংগ্রহ করতে হয় । জাত ও মৌসুম ভেদে ফলনে পার্থক্য হয় । শীতকালে ২৫০ কেজি/শতক এবং গ্রীষ্মকালে ৮০-১০০ কেজি/শতক ফলন হয়ে থাকে ।
টমেটো চাষ পদ্ধতি । রোগ ও প্রতিকার : পোস্টটি সম্পর্কে আপনাদের মূল্যবান মতামত কমেন্টবক্সে জানাতে পারেন। সঠিকভাবে টমেটো চাষ পদ্ধতি জেনে টমেটো চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়অ সম্ভব হতে পারে।