সুস্বাস্থ্য

পাইলস এর লক্ষণ । পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

পাইলস এর লক্ষণ । পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় : বর্তমান সময়ে ব্যাপকহারে মানুষ পাইলস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যেকোন বয়সের মানুষই পাইলসে আক্রান্ত হতে পারে। আজকের পোস্ট থেকে আমরা পাইলস সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

পাইলস এর লক্ষণ ।পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়
পাইলস কেন হয় ? পাইলস এর লক্ষণ

পাইলস এর লক্ষণ । পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

পাইলস কি

পাইলস বা ‘হেমোরয়েড’ (বাংলায় অর্শ রোগ, ইংরেজীতে hemorrhoid) নামে পরিচিত রোগটি বর্তমানে খুবই প্রচলিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনিয়মিত জীবনাচরণ- খাদ্যাভ্যাসসহ নানা কারণে এই রোগ ব্যাপকভাবে বেড়েই চলেছে। পায়খানার রাস্তার মুখ যদি ফুলে যায় এবং সেখান থেকে রক্ত পড়ে ও পায়খানার রাস্তায় গোটার মত হয় তখন তাকে পাইলস বলা হয়। জটিলাকার ধারণ করার আগে অপারেশন ছাড়াই এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব। যেকোন বয়সের মানুষেরই পাইলস হতে পারে তবে ৪৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এই রোগের প্রভাব বেশি দেখা যায়।

পাইলস কত প্রকার

সাধারণত পাইলস দুই প্রকার হয়ে থাকে –

• অভ্যন্তরীণ পাইলস

• বাহ্যিক পাইলস

অভ্যন্তরীণ পাইলস এবং বাহ্যিক পাইলস এর নামকরন করা হয়েছে মলদ্বারে তাদের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে। এগুলি সাধারণ এবং মলদ্বারের ভিতরে মলদ্বারের খোলার উপরে ২ থেকে ৪ সেন্টিমিটার (সেমি) এর মধ্যে ঘটে।

পাইলস কত প্রকার
পাইলস কত প্রকার

অভ্যন্তরীণ পাইলস:

অভ্যন্তরীণ অর্শ্বরোগ চারটি শ্রেণী বা পর্যায়ের হয় যা প্রোল্যাপের উপর ভিত্তি করে।

• প্রথম পর্যায় – পাইলস ফুলে বাইরের দিকে বের হয়ে আসে না বা প্রলেপস হয় না।

দ্বিতীয় পর্যায় – মলমূত্র ত্যাগের পর পাইলস ফুলে বাইরের দিকে বের হয়ে আসে এবং তারপর আপনা- আপনি ঠিক হয়ে যায়।

তৃতীয় পর্যায় – পাইলস ফুলে বাইরের দিকে বের হয়ে আসে এবং নিজে নিজে ঠিক করতে হয়।

চতুর্থ পযায় – পাইলস ফুলে বাইরের দিকে বের হয়ে আসে বা প্রলেপস হয় এবং তা আর নিজে ঠিক হয়

না বা করা যায় না।

বাহ্যিক পাইলস:

বাহ্যিক পাইলস মলদ্বারের বাইরের প্রান্তে ছোট ছোট গলদ গঠন করে। এগুলো প্রায়শই চুলকানিদায়ক এবং বেদনাদায়ক হয়ে থাকে।

পাইলস এর লক্ষণ

পাইলস এর প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে  মলদ্বারের চারপাশ বা কোনো একপাশ ফুলে যাওয়া, টয়লেট করার সময় অতিরিক্ত চাপ পেলে রক্ত বের হয়ে আসা। পাইলস হলে কি কি সমস্যা হয় অর্থাৎ পাইলস এর লক্ষণ গুলো নিম্নে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো :

১) মলের সাথে রক্ত যাওয়া।

২) মলদ্বার এবং চারপাশে বেদনাদায়ক পিণ্ড।

৩)মল যাওয়ার সময় এবং পরে অস্বস্তি।

৪) মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি।

৫) মল ও অসংযম

৬) মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত।

৭) মলদ্বারে ভগন্দর।

৮) সংক্রমণ।

৯) স্ট্যাংগুলেটেড হেমোরয়েড, যেখানে পায়ু পেশি হেযেরয়েড রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

পাইলসের কারণ

আমাদের প্রাথমিক প্রশ্ন থাকে পাইলস কেন হয় । মূলতঃ আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস, চালচলন পাইলস রোগের অন্যতম কারণ।  মলদ্বারের চারপাশের রক্তনালী গুলো চাপে প্রসারিত হয় এবং ফুলে ওঠে যা থেকে তৈরি হয় পাইলস। আসুন আমরা জেনে নিই কোন কোন কারণে পাইলস হতে পারে:

১) দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য।

২) ভারী ওজন উত্তোলন।

৩) দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া।

৪) মলত্যাগ করার সময় জোরে চাপ দেওয়া।

৫) শারীরিক পরিশ্রম না করা ।

৬) অতিরিক্ত ওজন।

৭) শক্ত বা কষা পায়খানা।

পাইলস এর চিকিৎসা

পায়ুদ্বার সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা হলে প্রথমেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এ ধরনের অসুখের ক্ষেত্রে অনেকেই চেপে যান প্রথমে, যা অসুখের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসকেরা রোগ নির্ণয় করে প্রক্টোস্কোপির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা শুরু করতে পারেন।

প্রথম পর্যায়ে মলম, ইনজেকশন বা রাবার ব্যান্ড লাইগেশনের সাহায্যেই রোগ নিরাময় করা সম্ভব। অসুখের মাত্রা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেলে অবশ্য শল্যচিকিৎসা ছাড়া উপায় নেই। তবে সব কয়টি ক্ষেত্রেই রোগটি ফিরে আসার শঙ্কা থাকে, যদি না সাবধানে থাকা যায়।

এজন্য বদলে ফেলুন লাইফস্টাইল। পাইলস বা পায়ুদ্বার সংক্রান্ত যে কোনো অসুখের জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী অনিয়মিত লাইফস্টাইল। এজন্য খাওয়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে। এড়িয়ে চলতে হবে ক্যাফিন জাতীয় পানীয়, তেল-ঝাল মশলাযুক্ত রান্না। পাইলসের রোগীদের পক্ষে শুকনো লঙ্কা বিষতুল্য। ভারী জিনিস তোলাও কিন্তু বারণ। পাইলস থেকে ক্যান্সার হওয়ার পূর্বেই এর চিকিৎসা করা জরুরি। রিং লাইগেশন এবং লংগো অপারেশনের দ্বারা শতকরাই প্রায় ১০০% রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন। প্রচলিত এই অপারেশনে মলদ্বারের তিনটি অংশ কাটার প্রয়োজন হয়।

এই অপারেশন শুধু তাদের জন্যই করা হয় যাদের রিং লাইগেশন এর জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং যারা লংগো অপারেশন করানোর জন্য মেশিন কিনতে অক্ষম।

চলিত অপারেশনের মতই আরেকটি অপারেশন হলো লেজার অপারেশন। পার্থক্য শুধু এটাই যে, লেজার অপারেশনে বিম ব্যবহার করা হয়। এবং প্রচলিত অপারেশনে সার্জিক্যাল নাইফ ব্যবহার করে কাটাকাটির কাজ করা হয়।

পাইলসের হোমিও চিকিৎসা

পাইলসের যার জন্য হোমিওপ্যাথি খুব ভালো চিকিৎসা আছে। কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণে রাখলে এবং ২ মাস নিয়মিত হোমিও ঔষধ সেবন করলে পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যায়। পাইলস রোগের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা সাধারণত সকালে সালফার এবং সন্ধ্যায় নাক্স ভূমিকায় ওষুধটি দিয়ে থাকেন। সাধারণত এই দুইটি ঔষধ সরাসরি পাইলস নিরাময় করে না মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ের মাধ্যমে পাইলস নিরাময় করে থাকে। তাই অভিজ্ঞ কোনো হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ ক্রমে হোমিও চিকিৎসা গ্রহণ করা যেতে পারে।

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, পাইলস হবার পর প্রতিকারের চেষ্টা করার চেয়ে পাইলস হবার আগেই পাইলস প্রতিরোধের প্রতি মনযোগ দিতে হবে। তাই দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস, চলাফেরায় কিছু নিয়ম মেনে চললে পাইলস হতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব –

১) পানি পান বৃদ্ধি করুন: প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা পাইলসের চিকিৎসায় অত্যন্ত জরুরী। এখানে খেয়াল রাখতে হবে পানি যেন জীবাণুযুক্ত ও বিশুদ্ধ পানি হয়। কোন প্রকার কোমল পানীয়, চা, কফি এবং অ্যালকোহল ইত্যাদি জিনিস পান করা থেকে বিরত থাকুন।

২) ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: খাদ্য তালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যুক্ত করুন। ফাইবার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে ১) দ্রবণীয় ফাইবার ২) অদ্রবণীয় ফাইবার। দ্রবণীয় ফাইবারের খাবারগুলো হচ্ছে, শাক সবজি, ফলমূল, ডাল,মটরশুটি,শিম,ওটস, বিন জাতীয় খাবার ইত্যাদি। এবং দ্রবণীয় ফাইবার জাতীয় খাবার গুলো হচ্ছে, পূর্ণ শস্য বা হোল গ্রেইন খাবার, বাদাম লালাটা, বিচি সহ ফল সবজি ইত্যাদি। উক্ত খাবারগুলো আপনার খাদ্য তালিকা যোগ করতে হবে।

৩) ইসবগুলের ভুষি: পাইস রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা ইসুবগুলের ভুষি বেশ কার্যকর। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সক্ষম। এতে থাকা অদ্রবনীয় ফাইবার পাইলস রোগীদের পায়খানা নরম করে দেয় যার ফলে ধীরে ধীরে পাইলস ভালো হয়ে যায়। যাত্রা অতিরিক্ত ইসবগুলের ভুষি খাবেন না এর ফলে পেটে ব্যথা ও গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।

৪) টয়লেটে কম সময় ব্যায় করুন: পাইলসের সবচেয়ে বড় কারণ হলো টয়লেটে সময় ব্যায় বেশি করা। অনেকে আছে টয়লেটে গেলে অনেক সময় পার করেন, মোবাইল ফোনে গেম খেলে ও ভিডিও দেখে। আজ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে এসব অভ্যাস

ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম

পাইলস থেকে বাঁচার ঘরোয়া উপায়

১) নারকেল তেল : পাইলসের চিকিৎসায় নারকেল তেল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য আপনাকে এক চামচ নারকেল তেল ও এক চিমটি হলুদের গুড়া মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এইবার এই পেস্ট মলদ্বারের বাইরের অংশের পাইলসের উপরে লাগান। দেখবেন ধীরে ধীরে পাইলস দূর হয়ে যাবে

২) অ্যালোভেরা জেল : অ্যালোভেরা জেল এর শীতল প্রভাবের জন্য বেশ পরিচিত। পাইলসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অ্যালোভেরা জেল ও সাথে হলুদ যোগ করে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এবার প্রতি রাতে ঘুমানো যাওয়ার আগে এই পেস্টটি পাইলসের স্থানে লাগান। দেখবেন কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাইলস দূর হয়ে যাবে।

৩) দেশি ঘি : ঘি অনেক গুণাগুণ সম্পন্ন প্রতিদিন ঘি সেবন করলে অনেক রোগ থেকেই মুক্তি পাওয়া যায়। পাইলসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পরিবার মত ঘি নিয়ে সাথে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এবার নিয়ম করে এই পেস্টটি পাইলসের জায়গায় লাগান দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই পাইলসের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

৪) পানি ও পানিসমৃদ্ধ খাবার : ফল কিংবা শাক-সবজি, মটরশুঁটি, ডাল, রাজমা, ঢেঁকিতে ছাটা চাল, পেপে, কলা, কিসমিস ,আঙ্গুর, আলুবোখারা, আপেল, টমেটো, শসা ,পেঁয়াজ,বাঁধাকপি,ফুলকপি, গাজর ইত্যাদি বেশি করে খেতে হবে। এছাড়াও ফাইবার বা আঁশসমৃদ্ধ খাবারও বেশি খেতে হবে।

ভলিবল খেলার নিয়ম । ভলিবল কোর্টের মাপ । বিস্তারিত

পাইলস হলে কি কি খাওয়া যাবেনা

কোনো খাবারই মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। তাই পাইলস হবার আগেই কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে এ জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করতে হবে।।  পাইলস হলে নিচের খাবারগুলো যথাসম্ভব কম খেতে হবে –

১)পনির বা চিজের যত দুগ্ধজাত খাবার।

২) ঘন দুধ

৩) গরু, খাসির মাংস

৪) আটা-ময়দার তৈরি খাবার

৫) মদ

৬) অতিরিক্ত মসলা যুক্ত খাবার

৭) চা ও কফি

৮) ফাস্টফুড

৯) ধূমপান

১০) অতিরিক্ত চিনি

পরিশেষে, পাইলস প্রাণঘাতি কোনো মরনব্যাধি নয়। প্রাথমিক কালে চিকিৎসা করালে সহজেই পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই পাইলস হলে বিলম্ব না করে দ্রুত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে হবে। আর সুন্দর নিয়মমাফিক খাদ্যাভ্যাস ও পরিচ্ছন্নতার প্রতিও মনযোগী হতে হবে। পাইলস সম্পর্কে উইকিপিডিয়া থেকেও জানতে পারেন।

পাইলস এর লক্ষণ । পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় : পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসলে আমাদের শ্রম স্বার্থক হবে। আপনাদের মূল্যবান মতামত কমেন্টবক্সে জানাতে পারেন । ধন্যবাদ।

Samim Ahmed

Hey! I'm Samim Ahmed (Admin of ShikhiBD). I love to write and read on the topic of current affairs. Since my childhood; I have been an expert in writing feature posts for various magazines.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *