লেখাপড়াসুস্বাস্থ্য

বেগুন চাষ পদ্ধতি – পরিচর্যা । বেগুনের উপকারিতা

বেগুন চাষ পদ্ধতি – পরিচর্যা । বেগুনের উপকারিতা : বেগুন অতি পরিচিত একটি সবজি। যা সারা বছর পাওয়া যায়। এদেশ ছাড়াও ভারত, চীন, জাপান পাকিস্তান, ফিলিপাইন, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ ইউরোপীয় দেশসহ অনেক দেশে এর চাষ হয়ে থাকে।

বেগুন চাষ পদ্ধতি – পরিচর্যা । বেগুনের উপকারিতা

বেগুনের উপকারিতা

বেগুন চাষ পদ্ধতি জানার পূর্বে আমরা জেনে নিই বেগুনের পুষ্টিগুণ :

বেগুনে আছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার, যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। কোলন ক্যানসারের আক্রমণ ঠেকায় বেগুন। বেগুনে পাওয়া যায় ভিটামিন বি-সিক্স, ফ্ল্যাভোনয়েডস যা হার্টের রোগ প্রতিরোধ করে। প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় হার্টের ধমনি ভাল থাকে এবং হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমায়।

বেগুনের উপকারিতা

১। পটাসিয়াম এবং অ্যান্থোসায়ানিন থাকায় বেগুন খেলে রক্তচাপ ঠিক থাকে।

২।  বেগুনে কার্বোহাইড্রেট কম থাকে এবং ফাইবার বেশি থাকে তাই ডায়াবেটিক রোগীরা অনায়াসে বেগুন খেতে পারেন। বেগুন খেলে রক্তে শর্করার পরিমান ঠিক থাকে।

৩।  বেগুনে আছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার, যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। কোলন ক্যানসারের আক্রমণ ঠেকায় বেগুন।

৪।  বেগুনে আছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, যা খিদে কমাতে সাহায্য করে। তাই যাঁরা খাই খাই রোগে ভোগেন তাঁরা বেগুন খেলে কমবে ওজন।

৫।  বেগুনে পাওয়া যায় ভিটামিন বি-সিক্স, ফ্ল্যাভোনয়েডস যা হার্টের রোগ প্রতিরোধ করে। প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় হার্টের ধমনি ভাল থাকে এবং হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমায় ৷

৬।  বেগুনে আছে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিডের মতো শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রক্তে খারাপ কোলেস্টোরলের পরিমান কমিয়ে দেয়।

৭। শুধু হার্টই নয় মস্তিষ্কও ভাল রাখে বেগুন। বেগুনে থাকা ফাইটোনিউট্রিন্টস মস্তিষ্কের কোষ সুস্থ রাখে ।

৮। প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং জল মজুত থাকায় বেগুন খেলে ত্বক সজীব এবং উজ্জ্বল থাকে। বলিরেখা আটকে দেয় বেগুন ।

৯। প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকায় ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধে কার্যকরী বেগুন ।

১০।  ত্বকের ক্যানসারের আশঙ্কা কমিয়ে দেয় বেগুন।

১১।  ত্বকের শুষ্কতা কমিয়ে নরম ভাবে এনে দেয় বেগুন।

১২।  চুলের উজ্জ্বল ভাব এবং বাউন্স আনে বেগুন।

জানাজার নামাজের নিয়ম ও দোয়া (অর্থ ও উচ্চারণসহ)

বেগুনের জাতের নাম

ইসলামপুরী, শিংনাথ, উত্তরা, নয়নকাজল, মুক্তকেশী, খটখটিয়া, তারাপুরী, নয়নতারা উল্লেখযোগ্য । বারমাসী কালো ও সাদা বর্ণের জাত (ডিম বেগুন) রয়েছে। বিদেশি জাতের মধ্যে ব্ল্যাক বিউটি, ফ্লোরিডা বিউটি, উল্লেখযোগ্য ।

বীজ বপন ও চারা উৎপাদন

বেগুন চাষের জন্য চারা উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শীতকালীন বেগুন চাষের জন্য শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি হতে আশ্বিন মাস এবং বর্ষাকালীন বেগুন চাষের জন্য চৈত্র মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়। বালি, কমপোস্ট ও মাটি সমপরিমাণে মিশিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হয়।

বীজ গজানোর ৮-১০ দিন পর চারা তুলে দ্বিতীয় বীজতলায় রোপণ করতে হয়।

বাছাইকৃত সেরা ৫০ টি ইসলামিক উক্তি ও মণীষীদের বাণী

জমি নির্বাচন

দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি বেগুন চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। তবে পানি অপসারণের ভালো ব্যবস্থা থাকলে এঁটেল ও দোআঁশ মাটিতেও বেগুনের চাষ করা যায় ।

জমি তৈরি

জমি তৈরির জন্য ৪-৫ বার আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে তৈরি করতে হবে । ভালো ফসল পেতে হলে জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে।

বেগুন গাছে সার দেওয়ার নিয়ম

সারের নামশতক প্রতি
গোবর৪০ কেজি
ইউরিয়া১ কেজি
টিএসপি৫০০ গ্রাম
এমওপি৫০০ গ্রাম

বেগুন চাষে সার প্রয়োগ পদ্ধতি

ক) ইউরিয়া ছাড়া সব সার জমির শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হয়। তবে গোবর জমি তৈরির প্রথম দিকে প্রয়োগ করাই উত্তম ।

খ) ইউরিয়া সার চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর থেকে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে ।

চারা রোপন

এক মাস বয়সের সবল চারা কাঠির সাহায্যে তুলে নিতে হবে । চারাগাছের শিকড়ের যেন ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । এর পর ৭৫ সেমি দূরত্বের সারিতে ৬০ সেমি দূরে দূরে চারা রোপণ করতে হবে ।

পরিচর্যা

মাটিতে রসের অভাব হলে বা মাটি শুকিয়ে গেলে ১০-১৫ দিন পর পানি সেচ দিতে হবে। সেচের পর নিড়ানি দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে । আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে ।

বেগুন গাছের রোগ ও প্রতিকার

এ দেশে কমপক্ষে ১৬ প্রজাতির পোকা এবং একটি প্রজাতির মাকড় বেগুন ফসলের ক্ষতি করে থাকে । এর মধ্যে বেগুনের প্রধান শত্রু ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা। এই পোকা বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্র করে । আক্রান্ত ডগা ও ফল সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে । এছাড়াও ম্যালাথিয়ন বা সুমিথিয়ন নামক কীটনাশকের যে কোনো একটি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। এছাড়া নিম্নলিখিত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুনের বালাই দমন করা যায়-

ক) কলম চারা ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুনের উইল্টরোগ দমন করা যায় ।

খ) ফেরোমন ও মিষ্টিকুমড়ার ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুন জাতীয় ফসলের মাছি পোকা দমন করা যায় । গ) মুরগির পচনকৃত বিষ্ঠা ও সরিষার খৈল ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন সবজি যেমন- বেগুন, টমেটো, শশা, বাঁধাকপি ফসলের মাটি বাহিত রোগ দমন করা যায় ।

ঘ) সঠিক সময়ে আগাছা দমন ও মালচিং করলে ফলন বহুগুণে বৃদ্ধি পায় ।

ঙ) পোকা প্রতিরোধী জাত ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুনের ডগা ও ফলের মাজরা পোকা দমন করা যায় । যেমন- বারি বেগুন-১ (উত্তরা), বারিবেগুন-৫ (নয়নতারা), বারিবেগুন-৬, বারিবেগুন-৭ ইত্যাদি পোকা প্রতিরোধী জাত ।

চ) পোকার আক্রমণমুক্ত চারা ব্যবহার করতে হবে ।

ছ) সুষম সার ব্যবহার করে ।

জ) শস্যপর্যায় অনুসরণ করে

ফসল সংগ্রহ ও ফলন

চারা রোপণের ৩০-৪০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসে। বেগুনের ফল বীজ শক্ত হওয়ার আগেই সংগ্রহ

করতে হয় । সাধারণত প্রতি শতকে বা ৪০ বর্গমিটার জমিতে ১৪০ কেজি বেগুন উৎপন্ন হয় । উত্তরা বেগুন ২৫০ কেজি পর্যন্ত ফলন দেয়।

বিপণন

বেগুন ফসল সংগ্রহের পর ঠাণ্ডা ও খোলা জায়গায় কয়েক দিন সংরক্ষণ করা যায় । তবে বস্তায় বেশিক্ষণ রাখা ঠিক হবে না । এতে বেগুন তার স্বাভাবিক রং হারাতে পারে এবং পচে যেতে পারে ।

বেগুন চাষ পদ্ধতি ও বেগুনের উপকারিতা উইকিপিডিয়া থেকেও জানতে পারেন। ধন্যবাদ

Samim Ahmed

Hey! I'm Samim Ahmed (Admin of ShikhiBD). I love to write and read on the topic of current affairs. Since my childhood; I have been an expert in writing feature posts for various magazines.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *