খেলাধুলা

ব্যাডমিন্টন কোর্টের মাপ । ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম বিস্তারিত

ব্যাডমিন্টন কোর্টের মাপ । ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম বিস্তারিত : ব্যাডমিন্টন সারা বিশ্বে একটি জনপ্রিয় খেলা। স্বল্প পরিসরে অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যক লোকে এই খেলা খেলা যায় বলে এই খেলার প্রচলন প্রায় সর্বত্র। আজকের পোস্ট থেকে আমরা ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম কানুন বিস্তারিত জানবো।

ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম
ব্যাডমিন্টন খেলার দৃশ্য

ব্যাডমিন্টন কোর্টের মাপ । ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম বিস্তারিত

ব্যাডমিন্টন খেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :

ব্যাডমিন্টন খেলার উৎপত্তি নিয়ে বহুমত থাকলেও অধিকাংশের ধারণা এ খেলার জন্ম হয়েছে ভারতের পুণাতে। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে পুনায় অবস্থিত ইংরেজ সেনারা স্থানীয় লোকজনদেরকে শাটল কর্ক ও ছোট ব্যাট দিয়ে খেলতে কৌতুহল বোধ করেন। তারা স্থানীয় লোকজনদেরকে কাছ থেকে ঐ খেলা শিখে ছুটিতে ইংল্যান্ডে যেয়ে খেলাটি প্রচলন করেন।

ভারতে কর্মরত ইংরেজ সেনারা ছুটিতে বাড়ী গেলে ১৮৭০ সালে ইংল্যান্ডের বোফোর্টের ডিউক গ্লসেস্টারসায়রের অন্তর্গত তার নিজ বাড়ীতে (যার নাম ব্যাডমিন্টন) এক ভোজ সভায় দেশে ফেরা ঐসব গৈণ্য বিভাগের কয়েকজন অফিসারকে নিমন্ত্রণ করেন ও পুণা থেকে শিখে আসা খেলাটি প্রদর্শনীর অনুরোধ করেন। অনেক অতিথিদের উপস্থিতিতে গণ ভোজ সভায় খেলাটি প্রদর্শিত হয়। সে থেকেই বো ফোর্ট ডিউকের বাড়ীর নামানুসারে ব্যাডমিন্টন খেলার নামকরণ হয়।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন খেলা সুপরিচিতি থাকায় এশিয়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ১৯৫৭ সালে এশিয়ান ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন গঠিত হয়। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে জাতীয় ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন গড়ে উঠে। এ ছাড়াও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং গ্রামগঞ্জে ছোট ছোট সংগঠনের মাধ্যমে ব্যাডমিন্টন খেলার প্রচলন রয়েছে। সাধারণত জিমনেসিয়ামে উডেন ফ্লোরে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। এই খেলার মাধ্যমে শিশুদের বিভিন্ন রকম সামাজিক দক্ষতা অর্জিত হয়। যেমন-শৃঙ্খলাবোধ, পারস্পরিক সহযোগিতা, নেতৃত্ববোধ, সহমর্মিতা ইত্যাদি।

ব্যাডমিন্টন কোর্টের মাপ

ব্যাডমিন্টন কোর্টের মাপ
ব্যাডমিন্টন কোর্টের মাপ

ব্যাডমিন্টন কোর্ট

একক কোর্টের দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট, প্রস্থ ১৭ ফুট এবং দ্বৈত কোর্টের দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট, প্রস্থ ২০ ফুট।

নেট বা জাল ও দন্ড বা পোস্ট

মাটির উপরে পোস্ট বা দন্ড টি ৫-১ হবে। এই দন্ডের উপরে নেটকে বেঁধে রাখতে হবে। এবং নেটের মাঝখানের উচ্চতা হবে ৫ ফুট, নেটের উপরি অংশে ৭৫ মিলিমিটার সাদা টেপ বা ফিতা দিয়ে এঁটে দিতে হবে, যা পোস্টের উপরের দিকে থাকবে।

ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম

(ক) খেলোয়াড়

সাধারণত ব্যাডমিন্টন একক বা দ্বৈত খেলা হয়। একক খেলায় একজনের প্রতিপক্ষ একজন করে মোট দু’জন খেলে এবং দ্বৈত খেলায় দুইজনের প্রতিপক্ষ দুইজন করে মোট চারজন খেলে।

খ) খেলা আরম্ভ

বিজয়ী দলনেতা সার্ভিস বা সাইড পছন্দ করতে পারেন। ডান সার্ভিস কোর্ট দিয়ে কোনাকুনি সার্ভিসের মাধ্যমে ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু হয়।

হযরত সালমান ফারসির ইসলাম গ্রহণ এর কাহিনী

গ) ফলাফল

সিঙ্গেলস(একক) এবং ডাবলস (দ্বৈত) খেলায় ২১ পয়েন্টে গেম সম্পন্ন হয়। কিন্তু ২ পয়েন্টের ব্যবধান থাকতে হবে। যেমন—২০-২২, ২১-২৩ ইত্যাদি। উভয় দলের পয়েন্ট সমান হওয়াকে ডিউস বলে। সর্বোচ্চ ৩০ পয়েন্টের মধ্যে অবশ্যই গেম শেষ করতে হবে অর্থাৎ খেলা চলতে চলতে যখন উভয় দলের পয়েন্ট ২৯ হবে তখন যে বা যে দল আগে ৩০ পয়েন্ট পাবে সে বা সে দল গেম জিতবে । তৃতীয় সেটে ১১ পয়েন্ট হলে প্রান্ত বদল করতে হবে। তিনটি গেমের মধ্যে যে বা যে দল দুইটি গেম জিতবে, সে দল বিজয়ী হবে।

ঘ) খেলা পরিচালনা

ব্যাডমিন্টন খেলা পরিচালনার জন্য ১ জন আম্পায়ার, ১ জন রেফারি, ১ জন স্কোরার, ২ থেকে ৪ জন লাইন্সম্যান এবং আলাদাভাবে ২ জন পরিবেশক বিচারক রাখা হয়।

ব্যাডমিন্টন খেলার কৌশল

র‍্যাকেট ধরা (Grip)

র‍্যাকেট সঠিকভাবে ধরার উপরই ব্যাডমিন্টন খেলা অনেকটা নির্ভর করে। র‍্যাকেটের মাথা লম্বাভাবে উপর দিক করে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী দিয়ে র‍্যাকেটের হাতল এমনভাবে ধরতে হবে, যেন ইংরেজি ‘ভি’ অক্ষরের মত

দেখায়। হাতের তালুর গোড়ালির সাথে র‍্যাকেটের প্রান্ত আটকে থাকবে।

পরিবেশন বা সার্ভিস করা

সাধারণত দুই ধরনের সার্ভিসের কৌশল জানলেই হয়। যথা-

ক) শর্টসার্ভিস

শাটলটি যখন খুব নিচু দিয়ে নেট পার করে বিপক্ষের সার্ভিস এলাকার শট সার্ভিস লাইন সংযুক্ত কোনায় ফেলা হয় তখন একে শট সার্ভিস বলে ।

খ) হাই ড্রাইভ সার্ভিস

যখন ২০ ফুট বা তার চেয়ে উঁচু দিয়ে শাটলটি খাড়াভাবে বিপক্ষ কোর্টের বেইজ লাইনের কাছে ফেলা হয় তখন তাকে হাই ড্রাইভ সার্ভিস বলা হয়।

স্ট্রোক বা আঘাত করা

স্ট্রোক বা আঘাত করার কৌশলগুলোকে মোটামুটি চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

ক) ফোরহ্যান্ড স্ট্রোক

শরীরের ডান পাশ দিয়ে শাটলে আঘাত করতে হবে। র‍্যাকেট পিছন দিকে নেওয়ার সময় ডান পায়ের উপর শরীরের ভর থাকবে। আঘাত করার সাথে সাথে শরীরের ভর ডান পা থেকে বাম পায়ের উপর চলে আসবে।

খ) ব্যাকহ্যান্ড স্ট্রোক

ডান পা ও কাঁধ নেটের দিকে থাকবে, শরীরের বাম পাশ দিয়ে শাটলে আঘাত করতে হবে। র‍্যাকেট পিছন দিকে নেওয়ার সময় বাঁ পায়ের উপর শরীরের ভর থাকবে। আঘাত করার সাথে সাথে শরীরের ভর ডান পায়ের উপর চলে আসবে।

গ) ড্রপ স্ট্রোক

বাঁ পা আগে দিয়ে ডান পায়ের উপর শরীরের ভর রাখতে হবে। শরীর সামান্য পিছনে ঝুঁকিয়ে র‍্যাকেট মাথার উপর উঠিয়ে চাপ মারার ভান করে অকস্মাৎ গতি কমিয়ে শাটল বিপক্ষের কোর্টে নেটের কাছে ফেলতে হবে। আঘাত করার সাথে সাথে শরীরের ভর বাম পায়ের উপর চলে আসবে।

৬ মাস বাচ্চার খাবার তালিকা কি হওয়া উচিত? জানুন

ঘ) ওভারহ্যান্ড স্ট্রোক

ডান পায়ের উপর শরীরের ভর রাখতে হবে। শরীর সামান্য পিছনে ঝুঁকিয়ে মাথার উপর দিয়ে পিছন দিক থেকে র‍্যাকেট তুলে শাটলে আঘাত করতে হবে।

আঘাত করার সাথে সাথে শরীরের ভর বাম পায়ের উপর চলে আসবে।

ব্যাডমিন্টন কোর্টের মাপ । ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম বিস্তারিত- পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসলেই আমাদের শ্রম স্বার্থক হবে। নিয়মিত খেলাধুলা, শরীরচর্চার দ্বারা শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। ব্যাডমিন্টন খেলা সম্পর্কে উইকিপিডিয়া থেকেও দেখতে পারেন । আমাদের পোস্টটি বালো লাগলে কমেন্টবক্সে আপনার মূল্যবান মতামত জানাবেন। ধন্যবাদ।

Samim Ahmed

Hey! I'm Samim Ahmed (Admin of ShikhiBD). I love to write and read on the topic of current affairs. Since my childhood; I have been an expert in writing feature posts for various magazines.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *