মরিচ চাষ করার নিয়ম । সার-কীটনাশক প্রয়োগ ও পোকামাকর দমন : বাংলাদেশে মরিচ একটি মসলা ফসল । ঝালের জন্য কাঁচা ও পাকা মরিচ ব্যবহার করা হয়। কাঁচা মরিচে ভিটামিন ‘সি’ বেশি থাকে । বর্তমানে ঝালহীন এক ধরনের মরিচও পাওয়া যায়। একে কেপসিকাম মরিচ বলে । এই মরিচ সালাদ হিসাবে ব্যবহৃত হয় ।
মরিচ চাষ করার নিয়ম । সার-কীটনাশক প্রয়োগ ও পোকামাকর দমন
মরিচের বিভিন্ন জাত
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় মরিচের বিভিন্ন জাত ছড়িয়ে রয়েছে । যেমন : বিন্দু, চল্লিশা, ধানী, উবদা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বগুড়া ইত্যাদি । এ ছাড়া বাংলা লঙ্কা (বারি মরিচ-১) নামের অনুমোদিত জাতটি সারা বছর চাষের উপযোগী।
মাটি : পানি নিকাশের সুবিধাযুক্ত বেলে-দোআঁশ থেকে এঁটেল-দোআঁশ মাটিতে মরিচ ভালো হয় । তবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ বা পলি- দোআঁশ মাটি মরিচ চাষের জন্য উত্তম। মরিচগাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না ।
মরিচ চাষের উপযুক্ত সময়
রবি মৌসুমে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। খরিপ মৌসুমে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বীজতলায় বীজ বপন করা যায় । চারায় ৪-৫টি পাতা গজালে মাঠে রোপণের উপযুক্ত হয় ।
বীজ হার, বপন ও রোপণ দূরত্ব : সরাসরি মূল জমিতে বীজ বপন করলে প্রতি শতক জমির জন্য ১২-১৬ গ্রাম বীজ লাগে । বীজতলায় চারা তৈরি করে লাগালে এর অর্ধেক বীজ লাগে । রবি মৌসুমে চারা এমনভাবে রাখতে হবে, যেন সারি থেকে সারি ২৫ সেমি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২০ সেমি হয় । খরিপ মৌসুমে মূল জমিতে ৪৫×৪৫ সেমি দূরে দূরে চারা রোপণ করতে হবে ।
বীজতলা তৈরি : সাধারণত রবি মৌসুমে সরাসরি মূল জমিতে বীজ বপন এবং খরিপ মৌসুমে প্রথমে বীজতলায় চারা তৈরি করে পরে মূল জমিতে রোপণ করা হয় । বীজতলার আকার ৩ মিটার×১ মিটার (দৈর্ঘ্যxপ্রস্থ) রাখা হয় এবং ১৫ সেমি উঁচু করা হয় । বীজতলার উপরের মাটি ১:১:১ অনুপাতে বালি, মাটি ও গোবর সার মিশিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হয় । শোধনকৃত বীজ ৫ সেমি দূরে দূরে সারি করে ২-৩ সেমি গভীরে বপন করতে হয় ।
বীজকে পিঁপড়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য বীজতলার চারধারে সেভিন ডাস্ট ছিটিয়ে দিতে হবে । ৭-১০ দিনের মধ্যে চারা গজায় । বীজ বপনের পর অতিবৃষ্টি বা প্রখর রোদ থেকে রক্ষা পেতে পলিথিন বা খড়ের ছাউনি দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিতে হয় । প্রয়োজন অনুযায়ী বীজতলায় সকালে বা বিকালে হালকা সেচ দিতে হবে । চারায় ৪-৫টি পাতা গজালে মাঠে রোপণের উপযুক্ত হয় ।
মরিচ চাষে সার প্রয়োগ
মরিচ চাষে সার প্রয়োগ এর সঠিক নিয়ম জেনে নিতে হবে । ৪-৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমি ভালোভাবে তৈরি করতে হবে । শেষ চাষের সময় শতকপ্রতি ৪০ কেজি গোবর সার, ১২০০ গ্রাম টিএসপি, ৫৪০ গ্রাম এমওপি, ৪৪০ গ্রাম জিপসাম সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে । অতঃপর সরাসরি বীজ বপন বা চারা রোপণের জন্য ১ মিটার চওড়া ও লম্বায় জমির আয়তন অনুসারে বেড তৈরি করতে হবে। পানি সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধার জন্য বেডগুলো ১৫ সেমি উঁচু এবং দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেমি চওড়া নালা রাখতে হবে ।
আন্তঃপরিচর্যা : জমি সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে । ইউরিয়া ও এমওপি সার চারা রোপণের ২০, ৪০ ও ৬০ দিন পর ৩ বার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবারে শতক প্রতি ২৮০ গ্রাম ইউরিয়া সার গাছের গোড়া থেকে ১০-১৫ সেমি দূরে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। শীত ও খরার সময় সেচের প্রয়োজন হয় । তাছাড়া প্রতি কিস্তি সার প্রয়োগের পর সেচ দেওয়া প্রয়োজন। সেচের কয়েক দিন পর মাটিতে চটা দেখা গেলে ভেঙে দিতে হবে ।
আগ্নেয়গিরি কি- আগ্নেয়গিরি কাকে বলে ? বিশ্বের জীবন্ত ১০টি আগ্নেয়গিরি
মরিচের রোগ ও পোকামাকড় দমন
রোগ দমন : মরিচে চারা অবস্থায় ড্যাম্পিং অফ রোগ হতে পারে। এ রোগ দমনের জন্য এক কেজি বীজ ৩ গ্রাম প্রোভেক্সের সাথে মিশিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে । বীজতলা শুকনা রাখতে হবে । মরিচ গাছ অনেক সময় আগা থেকে গোড়ার দিকে ক্রমান্বয়ে শুকিয়ে মারা যায়। একে ডাইব্যাক রোগ বলে। এ রোগ দমনের জন্য ১ গ্রাম ব্যাভিস্টিন ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হয়। হলুদ মোজাইক ভাইরাস রোগ দমনের জন্য আক্রান্ত গাছ দেখামাত্র তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে । রোগ প্রতিরোধী জাতের মরিচ চাষ করতে হবে ।
পোকামাকড় দমন : এক ধরনের ক্ষুদ্র মাকড়ের আক্রমণে চারা গাছের পাতা কুঁকড়িয়ে যায়। প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম থিওভিট মিশিয়ে ১০ দিন পর পর স্প্রে করে মাকড় দমন করা যায়। থ্রিপস ও জাবপোকার আক্রমণ দেখা দিলে ম্যালাথিয়ন ৫০ ইসি ১ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায় । ফসল সংগ্রহের সময় কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক ব্যবহার না করাই ভালো । ব্যবহার করলেও ৫-৭ দিন ফসল সংগ্রহ বন্ধ রাখা উচিত ।
বিশ্বখ্যাত মণীষীদের লেখা বন্ধু নিয়ে স্ট্যাটাস
মরিচ কতদিন পর পাওয়া যায়
চারা রোপণের ৩০-৪০ দিন পর গাছে ফুল আসা শুরু হয় । কাঁচা মরিচ পরিপক্ক হতে ২৫-৩০ দিন সময় লাগে । মরিচ পাকতে আরো ২৫-৩০ দিন সময় লাগে । কাঁচা মরিচ সপ্তাহে ২-৩ বার এবং পাকা মরিচ ১৫ দিন পর পর প্রায় ২-৩ মাস সংগ্রহ করতে হয় ।
ফলন : জাতভেদে ফলনে তারতম্য হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচ উৎপাদন করলে গড়ে ৬-১০ টন ফলন পাওয়া যায় । তবে শুকনা মরিচ উৎপাদন করলে ১.৫-২.৫ টন ফলন হয় ।
টবে মরিচ চাষ পদ্ধতি
এতক্ষণ আমরা মাঠে মরিচ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানলাম । এখন আমরা টবে মরিচ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো । টবে মরিচ চাষ করতে হলে প্রথমে ৬-১০ ইঞ্চি ব্যাসের মাটির বা প্লাস্টিকের টব নিতে হবে । টবের মাটি তৈরি করার জন্য দোআঁশ মাটি এক ভাগ, বেলে মাটি এক ভাগ এবং গোবর সার এক ভাগ নিয়ে ভালো ভাবে মেশাতে হবে। এবার টবের নিচের ছিদ্রের উপর হাঁড়ি বা কলসি বা ইটের টুকরো বসাতে হবে। যাতে অতিরিক্ত পানি চুইয়ে বের হয়ে যেতে পারে ।

মেশানো মাটি দিয়ে টব ভর্তি করতে হবে । প্রস্তুতকৃত টবে মরিচের চারা রোপণ করে হালকাভাবে ঝাঁঝরি দিয়ে পানি সেচ দিতে হবে। সারা দিনে অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা সূর্যের আলো পায় এমন জায়গায় টব বসাতে হবে। তবে চারা লাগানোর প্রথম কয়েক দিন টব দুপুরের সময় ছায়ায় রাখতে হবে ।
টবে মরিচ চাষের ক্ষেত্রে কম্পোস্ট বা গোবর সার ব্যবহার করাই ভালো। সারের অভাব হলে টবের উপরের মাটি সাদা হয়ে যায়, মাটিতে রসের অভাব দেখা যায় । এ রকম হলে নিড়ানি দিয়ে টবের মাটি আলগা করে সার মিশিয়ে দিতে হবে। টবে এমনভাবে পানিসেচ দিতে হবে, যেন পানি জমে না যায় । টবে ঘন ঘন পানিসেচ দিতে হয় বলে উপরের মাটি শক্ত হয়ে



