শিম চাষ পদ্ধতি ও শিম গাছের পরিচর্যা
শিম চাষ পদ্ধতি ও শিম গাছের পরিচর্যা : শিম বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় সবজি । শিমে প্রচুর পরিমাণে আমিষ থাকে। যদিও এটি শীতকালীন সবজি কিন্তু বর্তমানে অন্যান্য ঋতুতেও চাষ হচ্ছে।
শিম চাষ পদ্ধতি ও শিম গাছের পরিচর্যা
শিমের পুষ্টিগুণ
শিম চাষ পদ্ধতি জানার আগে আমরা জেনে নিই শিমের পুষ্টিগুণ কেমন ।
শিমের পুষ্টিগুণ : শিমে অসাধারণ পুষ্টিগুণ রয়েছে । প্রতি ১০০ গ্রাম শিমে ৮৬.১ গ্রাম জলীয় অংশ রয়েছে। এতে খনিজ উপাদান আছে ০.৯ গ্রাম, আঁশ ১.৮ গ্রাম, ক্যালোরি ৪৮ কিলোক্যালোরি, প্রোটিন ৩.৮ গ্রাম, শর্করা ৬.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২১০ মি.গ্রাম ও ১.৭ গ্রাম লৌহ রয়েছে।
শিমের উপকারিতা
শিম মানবদেহের নানান উপকার সাধন করে । যেমন-
১। শিম রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
২। শিম চুল পড়া কমায় ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ।
৩। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
৪। গর্ভবতী মহিলা ও শিশুর পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে।
৫। ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে।
৬। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
৭। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
শিম চাষের জন্য কোন মাটি উত্তম
দোআঁশ মাটি শিম চাষের জন্য উত্তম । তবে উত্তম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সব ধরনের মাটিতে শিম চাষ করা যায় ।
শিমের জাতের নাম
বারি শিম-১, বারি শিম-২, বারি শিম-৩, বারি শিম-৪, ইপসা শিম, ঘৃত কাঞ্চন, কার্তিকা, নলডক, বাঘনখা, বারমাসি প্রভৃতি শিমের জনপ্রিয় জাত ।
বীজ বপনের সময় : মধ্য জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময় ।
জমি তৈরি
বেশি জমিতে আবাদ করলে জমি কয়েকটি চাষ ও মই দিয়ে ঢেলা ভেঙে সমান করতে হবে। তবে বসতবাড়ির আশে পাশে, পুকুর পাড়ে, পথের ধারে ও জমির আইলে সাধারণত শিমের চাষ করা হয় ।
মাদা তৈরি
জমিতে মাদা (গর্ত) ৪৫ সেমি X ৪৫ সেমি X ৪৫ সেমি আকারে তৈরি করতে হবে। এক মাদা থেকে আরেক মাদার দূরত্ব ২.৫-৩ মিটার ।
শিম গাছে সার প্রয়োগ
প্রতিটি মাদা পচা আবর্জনা সার দিয়ে পূরণ করতে হবে। তারপর প্রতিটি মাদায় খৈল গুঁড়া, ছাই, টিএসপি, মিউরেট অব পটাশ মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। মাদাটি এমনভাবে ভরতে হবে যেন মাটি থেকে ভরাটকৃত মাদার উচ্চতা ১০ সেমি হয়। শিম ফসলটিতে নাইট্রোজেন সারের দরকার হয় না। কারণ এটি নিশুম পরিবারের ফসল । এদের শিকড়ে নডিউল বা গুটি তৈরি হয় যাতে প্রচুর বায়ুমণ্ডলীয় নাইট্রোজেন জমা থাকে ।
আগ্নেয়গিরি কি- আগ্নেয়গিরি কাকে বলে ? বিশ্বের জীবন্ত ১০টি আগ্নেয়গিরি
বীজ বপন
সার প্রয়োগের ৭-৮ দিন পর প্রতি মাদায় ৫-৬ টি বীজ বপন করতে হবে । চারা গজানোর পর প্রতি মাদায় ২টি সুস্থ ও সবল চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে ।
শিম গাছের পরিচর্যা
গাছ ঠিকমতো বাড়ার জন্য মাচা দিতে হবে । গাছের গোড়ার মাটি শক্ত হলে নিড়ানি দিয়ে তা আলগা করতে হবে । মাটিতে রসের অভাব হলে পানি সেচ দিতে হবে। বর্ষায় যাতে গাছের গোড়ায় পানি না জমে সে জন্য গোড়ায় মাটি উঠিয়ে দিতে হবে । চারা বড় হতে থাকলে ১৫-২০ দিন পর পর ২-৩ কিস্তিতে ৬০ গ্রাম টিএসপি ও ৬০ গ্রাম এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
শিম গাছের রোগবালাই
শিম গাছে জাব পোকা, থ্রিপস, পড বোরার ইত্যাদির আক্রমণ হতে পারে । জাব পোকা নতুন ডগা, পাতা, ফুল ও ফল ইত্যাদির রস চুষে খায়। নিমের বীজের শাঁস পিসে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে এদের দমন করা যায় । ভাইরাস আক্রান্ত গাছগুলো মাটিসহ উঠিয়ে গভীর গর্তে পুঁতে দিতে হবে।
শিমের ফলন
জাতভেদে শিমের ফলনের তারতম্য হয়ে থাকে। যেমন- বারি শিম-১ জাতের শিমের বীজ হেক্টরপ্রতি ২-৩ টন (৮-১২ কেজি/শতক) উৎপাদিত হয়। সবজি হিসাবে শিম পুরা মৌসুমে উঠানো যায় । আশ্বিন-কার্তিক মাসে শিম ধরে। শিম গাছ ৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে ফলন দেয় ।
ফুটবল মাঠের মাপ । খেলার নিয়ম ও ফুটবল খেলার কলাকৌশল
ফসল সংগ্ৰহ
জাত ভেদে বীজ বপনের ৯৫-১৪৫ দিন পর শিম গাছ থেকে শিম উঠানো যায়। বীজ হিসাবে শিম সংগ্রহ করতে শিম যখন গাছে শুকিয়ে হলদে বর্ণ হয়, তখন সংগ্রহ করা হয়। শিম থেকে বীজ বের করে পরিষ্কার ও শুষ্ক পাত্রে নিমের শুকনা পাতার গুঁড়াসহ সংরক্ষণ করতে হবে।
শিম চাষ সম্পর্কে আরও জানতে পারেন উইকিপিডিয়া থেকে।