সমাস কাকে বলে ? সমাস কত প্রকার? বিস্তারিত
সমাস কাকে বলে : সমাসের মাধ্যমে নতুন শব্দ গঠিত হয়। বাক্যের মধ্যে পরস্পর সম্পর্কিত একাধিক পদের এক শব্দে পরিণত হওয়ার নাম সমাস। নিচের বাক্য দুটির দিকে তাকানো যাক:
১ম বাক্য: পরীক্ষাসমূহের নিয়ন্ত্রক পরীক্ষার সময় সংক্রান্ত সূচি স্কুল ও কলেজে পাঠানোর নির্দেশ
দিয়েছেন ৷
২য় বাক্য: পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পরীক্ষার সময়সূচি স্কুল-কলেজে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ।
১ম বাক্যের ‘পরীক্ষাসমূহের নিয়ন্ত্রক’, ‘সময় সংক্রান্ত সূচি’ এবং ‘স্কুল ও কলেজ’ পদগুলো ২য় বাক্যে যথাক্রমে ‘পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক’, ‘সময়সূচি’ এবং ‘স্কুল-কলেজ’ হিসেবে সংক্ষিপ্ত হয়েছে। এই সংক্ষেপ প্রক্রিয়ার নাম সমাস ।

সমাস কাকে বলে ? সমাস কত প্রকার ?
সমস্তপদ কাকে বলে
সমাসবদ্ধ শব্দকে বলে সমস্তপদ, যেমন ‘পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক’, ‘সময়সূচি’ এবং ‘স্কুল-কলেজ’। এর প্রথম অংশের নাম পূর্বপদ এবং শেষ অংশের নাম পরপদ। এখানে ‘পরীক্ষা’, ‘সময়’ ও ‘স্কুল’ হলো পূর্বপদ এবং ‘নিয়ন্ত্রক’, ‘সূচি ও ‘কলেজ’ হলো পরপদ ।
ব্যাসবাক্য কাকে বলে
যেসব শব্দ দিয়ে সমস্তপদকে ব্যাখ্যা করা হয়, তাকে ব্যাসবাক্য বলে। এখানে ‘পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদের ব্যাসবাক্য হলো ‘পরীক্ষাসমূহের নিয়ন্ত্রক’, ‘সময়সূচি’ পদের ব্যাসবাক্য হলো ‘সময় সংক্রান্ত সূচি’ এবং ‘স্কুল- কলেজ’ পদের ব্যাসবাক্য হলো ‘স্কুল ও কলেজ’। এছাড়া যেসব পদ নিয়ে সমাস হয়, সেগুলোকে সমস্যমান পদ বলে। ১ম বাক্যের ‘পরীক্ষাসমূহের নিয়ন্ত্রক’ পদগুলোর ‘পরীক্ষাসমূহের’ এবং ‘নিয়ন্ত্রক’ হলো সমস্যমান পদ ।
সমস্তপদ সাধারণত এক শব্দ হিসেবে লেখা হয়, যেমন ‘সময়সূচি’। উচ্চারণ বা অর্থের বিভ্রান্তি ঘটার আশঙ্কায় কিছু ক্ষেত্রে পূর্বপদ ও পরপদের মাঝখানে হাইফেন (-) বসে, যেমন ‘স্কুল-কলেজ। কিছু ক্ষেত্রে পূর্বপদ ও পরপদকে আলাদা লেখা হয়, যেমন ‘পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক’।
সমাস কত প্রকার
সমাস মূলত চার প্রকার। যথা: ১। দ্বন্দ্ব, ২। কর্মধারয়, ৩। তৎপুরুষ ও ৪। বহুব্রীহি।
১. দ্বন্দ্ব সমাস
দ্বন্দ্ব সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ উভয় পদের অর্থের সমান প্রাধান্য থাকে। যেমন – ‘সোনা-রুপা’ সমস্তপদের ব্যাসবাক্য ‘সোনা ও রুপা’। নিচের বাক্যে সমস্তপদটির প্রয়োগ থেকে এর পূর্বপদ ও পরপদের অর্থের প্রাধান্য বোঝা যাবে
সোনা-রুপার দাম বেড়ে গেছে।
অর্থাৎ সোনার দামও বেড়ে গেছে, রুপার দামও বেড়ে গেছে।
দ্বন্দ্ব সমাসের ক্ষেত্রে সমজাতীয়, বিপরীত ও অনুরূপ শব্দের সংযোগ ঘটে। যেমন – মা ও বাবা = মা-বাবা, স্বর্গ ও নরক = স্বর্গ-নরক, জমা ও খরচ = জমাখরচ, হাত ও পা = হাত-পা, উনিশ ও বিশ = উনিশ-বিশ, ঝড় ও বৃষ্টি = ঝড়বৃষ্টি, পোটলা ও পুটলি = পোটলা-পুটলি, তুমি ও আমি = – তুমি-আমি, আসা ও যাওয়া = আসা-যাওয়া, ধীরে ও সুস্থে = ধীরেসুস্থে, ভালো ও মন্দ = ভালোমন্দ ।
কিছু দ্বন্দ্ব সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের বিভক্তি সমাসবদ্ধ হলেও বিদ্যমান থাকে। এই ধরনের দ্বন্দ্ব সমাসের নাম অলুক দ্বন্দ্ব সমাস। যেমন-
হাতে ও কলমে = হাতে-কলমে, চোখে ও মুখে = চোখেমুখে, চলনে ও বলনে = চলনে-বলনে ইত্যাদি।
সমস্যমান পদ কখনো কখনো দুইয়ের বেশি হতে পারে। যেমন –
সাহেব, বিবি ও গোলাম সাহেব-বিবি-গোলাম; হাত, পা, চোখ ও কান = হাত-পা-চোখ-কান ইত্যাদি ।
শহীদ মিনার-জাতীয় পতাকা ও স্মৃতিসৌধ অংকন পদ্ধতি
২. কর্মধারয় সমাস
যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন গোলাপফুল, যা কাঁচা তাই মিঠা = কাঁচা-মিঠা ।
ক. কিছু কর্মধারয় সমাসের সমস্যমান পদে ‘যে’ যোজক থাকে, যেমন খাস যে জমি = খাসজমি, চিত যে সাঁতার = চিতসাঁতার
ভাজা যে বেগুন = বেগুনভাজা, সিদ্ধ যে আলু = আলুসিদ্ধ
কনক যে চাঁপা = কনকচাঁপা, টাক যে মাখা = – টাকমাথা
যে চালাক সে চতুর = চালাকচতুর, যে শান্ত সে শিষ্ট = শান্তশিষ্ট
খ. কিছু কর্মধারয় সমাসের পূর্বপদ সংখ্যাবাচক শব্দ হয়, সেগুলোকে দ্বিগু কর্মধারয় বলে। যেমন –
তিন ফলের সমাহার = ত্রিফলা, চার রাস্তার মিলন = চৌরাস্তা
গ. কিছু কর্মধারয় সমাসে সমস্যমান পদের মধ্যবর্তী এক বা একাধিক পদ লোপ পায়। এগুলো মধ্যপদলোপী কর্মধারয় নামে পরিচিত। যেমন –
ঘি মাখানো ভাত = ঘিভাত, হাতে পরা হয় যে ঘড়ি = হাতঘড়ি ঘরে আশ্রিত জামাই = ঘরজামাই, বিজয় নির্দেশক পতাকা = : বিজয়-পতাকা
ঘ. যার সঙ্গে তুলনা করা হয়, তা উপমান। কিছু কর্মধারয় সমাসে উপমানের সঙ্গে গুণবাচক শব্দের সমাস হয়। এগুলোকে উপমান কর্মধারয় বলে। যেমন:
কাজলের মতো কালো = কাজলকালো
শশের মতো ব্যস্ত = শশব্যস্ত
এই সমাসে পরপদ সাধারণত বিশেষণ হয়।
ঙ. যাকে তুলনা করা হয়, তা উপমেয়। কিছু কর্মধারয় সমাসে উপমেয় পদের সাথে উপমান পদের সমাস হয়। এগুলোকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন-
পুরুষ সিংহের ন্যায় = সিংহপুরুষ, আঁখি পদ্মের ন্যায় = পদ্মআঁখি, মুখ চন্দ্রের ন্যায় = চন্দ্রমুখ
এই সমাসে উভয় পদই বিশেষ্য হয়।
চ. কিছু কর্মধারয় সমাসে উপমেয় পদের সাথে উপমান পদের অভেদ কল্পনা করা হয়। এগুলোকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন-
বিষাদ রূপ সিন্ধু = বিষাদসিন্ধু, মন রূপ মাঝি = মনমাঝি ।
৩. তৎপুরুষ সমাস
সমস্যমান পদের বিভক্তি ও সন্নিহিত অনুসর্গ লোপ পেয়ে যে সমাস হয়, তার নাম তৎপুরুষ সমাস। এই সমাসে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় ।
ক. বিভক্তি লোপ পাওয়া তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ:
দুঃখকে প্রাপ্ত = দুঃখপ্রাপ্ত, ছেলেকে ভুলানো = ছেলে-ভুলানো
মামার বাড়ি = মামাবাড়ি, ধানের খেত = ধানখেত, পথের রাজা = রাজপথ গোলায় ভরা = গোলাভরা, গাছে পাকা = গাছপাকা, অকালে মৃত্যু = অকালমৃত্যু ।
খ. সন্নিহিত অনুসর্গ লোপ পাওয়া তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ:
মধু দিয়ে মাখা = মধুমাখা, চিনি দিয়ে পাতা = চিনিপাতা ,রান্নার জন্য ঘর = রান্নাঘর, বিয়ের জন্য পাগলা = বিয়েপাগলা, গ্রাম থেকে ছাড়া = গ্রামছাড়া, আগা থেকে গোড়া = আগাগোড়া ।
গ. কিছু ক্ষেত্রে বিভক্তি লোপ পায় না, এসব তৎপুরুষ সমাসের নাম অলুক তৎপুরুষ, যেমন –
গরুর গাড়ি = গরুরগাড়ি, তেলে ভাজা = তেলেভাজা ।
৪. বহুবীহি সমাস
যে সমাসে পূর্বপদ বা পরপদ কোনোটির অর্থ না বুঝিয়ে অন্য কিছু বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন – বউ ভাত পরিবেশন করে যে অনুষ্ঠানে = বউভাত, লাঠিতে লাঠিতে যে যুদ্ধ = লাঠালাঠি ইত্যাদি।
ক. পূর্বপদ বিশেষণ এবং পরপদ বিশেষ্য হলে তাকে সমানাধিকার বহুব্রীহি বলে। যেমন – এক গোঁ যার = একগুঁয়ে, লাল পাড় যে শাড়ির = লালপেড়ে।
খ. পূর্বপদ ও পরপদ উভয়ই বিশেষ্য (কখনো কখনো ক্রিয়াবিশেষ্য) হলে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি হয়। যেমন গোঁফে খেজুর যার = গোঁফখেজুরে।
গ. যে বহুব্রীহি সমাসের ব্যাসবাক্য থেকে এক বা একাধিক পদ লোপ পায়, তাকে পদলোপী বহুব্রীহি বলে। যেমন – চিরুনির মতো দাঁত যার = চিরুনদাঁতি, হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = হাতেখড়ি।
ঘ. পারস্পরিক ক্রিয়ায় কোনো অবস্থা তৈরি হলে ব্যতিহার বহুব্রীহি হয়। যেমন- হাতে হাতে যে যুদ্ধ = হাতাহাতি, কানে কানে যে কথা = কানাকানি।
ঙ. যে বহুব্রীহি সমাসে সমস্যমান পদের পূর্বপদের বিভক্তি অক্ষুণ্ণ থাকে, তাকে অলুক বহুব্রীহি বলে। যেমন গায়ে এসে পড়ে যে = গায়েপড়া, কানে খাটো যে = কানেখাটো।
চ. যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ সংখ্যাবাচক, তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন- চার ভুজ যে ক্ষেত্রের = চতুর্ভুজ, সে (তিন) তার যে যন্ত্রের = সেতার।
সমাস সম্পর্কে আরও জানতে পারেন উইকিপিডিয়া থেকেও । ধন্যবাদ ।



