লেখাপড়া

পুরাতন ভৃত্য কবিতা (Puraton Vritto) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

পুরাতন ভৃত্য কবিতাটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চমৎকার একটি কবিতা।

পুরাতন ভৃত্য কবিতা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

পুরাতন ভৃত্য
পুরাতন ভৃত্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ।

পুরাতন ভৃত্য

ভূতের মতন চেহারা যেমন নির্বোধ অতি ঘোর-

যা-কিছু হারায় গিন্নি বলেন, কেষ্টা বেটাই চোর ।

উঠিতে বসিতে করি বাপান্ত, শুনেও শোনে না কানে-

যত পায় বেত না পায় বেতন, তবু না চেতন মানে ।

বড়ো প্রয়োজন, ডাকি প্রাণপণ, চিৎকার করি, ‘কেষ্টা’-

যত করি তাড়া নাহি পাই সাড়া, খুঁজে ফিরি সারা দেশটা।

তিনখানা দিলে একখানা রাখে, বাকি কোথা নাহি জানে –

একখানা দিলে নিমেষ ফেলিতে তিনখানা ক’রে আনে ।

যেখানে সেখানে দিবসে দুপুরে নিদ্রাটি আছে সাধা –

মহাকলরবে গালি দেই যবে ‘পাজি হতভাগা গাধা’

দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সে হাসে, দেখে জ্বলে যায় পিত্ত।

তবু মায়া তার ত্যাগ করা ভার – বড়ো পুরাতন ভৃত্য ।

ঘরের কর্ত্রী রুক্ষমূর্তি বলে, ‘আর পারি নাকো –

রহিল তোমার এ ঘরদুয়ার কেষ্টারে লয়ে থাকো ।

না মানে শাসন, বসন বাসন অশন আসন যত

কোথায় কী গেল – শুধু টাকাগুলো যেতেছে জলের মতো ।

গেলে সে বকজরে সারা দিনে আর দেখা পাওয়া তার ভার ।

করিলে চেষ্টা কেষ্ট ছাড়া কি ভৃত্য মেলেনা আর !’

শুনে মহা রেগে ছুটে যাই বেগ, আনি তার টিকি ধ’রে –

বলি তারে, ‘পাজি, বেরো তুই আজই, দূর করে দিনু তোরে।’

ধীরে চলে যায়, ভাবি গেল দায় । পরদিনে উঠে দেখি

হুঁকাটি বাড়ায়ে রয়েছে দাড়ায়ে বেটা বুদ্ধির ঢেঁকি ।

প্রসন্ন মুখ, নাহি কোনো দুখ, অতি অকাতরচিত্ত –

ছাড়ালে না ছাড়ে, কী করিব তারে মোর পুরাতন ভৃত্য ।।

পুরাতন ভৃত্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সে বছরে ফাঁকা পেনু কিছু টাকা করিয়া দালালগিরি ।

করিলাম মন শ্রীবৃন্দাবন বারেক আসিব ফিরি ।

পরিবার তায় সাথে যেতে চায়, বুঝায়ে বলিনু তারে –

পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য, নহিলে খরচ বাড়ে।

লয়ে রশারশি করি কষাকষি পোঁটলা পুঁটলি বাঁধি

বলয় বাজায়ে বাক্স সাজায়ে গৃহিণী কহিল কাঁদি,

‘পরদেশে গিয়ে কেষ্টারে নিয়ে কষ্ট অনেক পাবে।’

আমি কহিলাম, ‘আরে রাম রাম, নিবারণ সাথে যাবে।’

রেলগাড়ি ধায়; হেরিলাম হায় নামিয়া বর্ধমানে

কৃষ্ণকান্ত অতি প্রশান্ত তামাক সাজিয়া আনে ।

স্পর্ধা তাহার হেনমতে আর কত-বা সহিব নিত্য ?

যত তারে দুষি তবু হনু খুশি হেরি পুরাতন ভৃত্য ।।

নামিনু শ্রীধামে; দক্ষিণি বামে পিছনে সমুখে যত

লাগিল পাণ্ডা, নিমিষে প্রাণটা করিল কণ্ঠাগত ।

জন-ছয়-সাতে মিলি একসাথে পরম বন্ধুভাবে

করিলাম বাসা; মনে হল আশা আরামে দিবস যাবে । –

কোথা ব্রজবালা, কোথা বনমালা, কোথা বনমালী হরি!

কোথা হা হন্ত চিরবসন্ত! আমি বসন্তে মরি ।

বন্ধু যে-যত স্বপ্নের মতো বাসা ছেড়ে দিল ভঙ্গ –

আমি একা ঘরে, ব্যাধিখরশরে ভরিল সকল অঙ্গ।

ডাকি নিশিদিন সকরুণ, ক্ষীণ, ‘কেষ্ট, আয় রে কাছে,

এত দিনে শেষে আসিয়া বিদেশে প্রাণ বুঝি নাহি বাঁচে।’

হেরি তার মুখ ভরে ওঠে বুক, সে যেন পরম বিত্ত-

নিশিদিন ধ’রে দাঁড়ায়ে শিয়রে মোর পুরাতন ভৃত্য।।

মুখে দেয় জল, শুধায় কুশল, শিরে দেয় মোর হাত,

দাঁড়ায়ে নিঝুম, চোখে নাই ঘুম, মুখে নাই তার ভাত ।

বলে বার বার, ‘কর্তা, তোমার কোন ভয় নাই, শুন –

যাবে দেশে ফিরে, মাঠাকুরানীরে দেখিতে পাইবে পুন।’

লভিয়া আরাম আমি উঠিলাম, তাহারে ধরিল জ্বরে;

নিল সে আমার কালব্যাধিভার আপনার দেহ-‘পরে ।

হয়ে জ্ঞানহীন কাটিল দু দিন, বন্ধ হইল নাড়ী-

এতবার তারে গেনু ছাড়াবারে, এত দিনে গেল ছাড়ি ।

বহুদিন পরে আপনার ঘরে ফিরিনু সারিয়া তীর্থ।

আজ সাথে নেই চিরসাথি মোর সেই পুরাতন ভৃত্য ।।

ফিচার পোষ্টঃ সজনে পাতার গুণাগুণ জানুন

মন্তব্যঃ কবিগুরু ও নোবেল বিজয়ী বিশ্ববিখ্যাত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার পুরাতন ভৃত্য কবিতার মাধ্যমে এক স্মৃতিকাতরমুখী হৃদয়ের আকুতি পেশ করে গেছেন।

Samim Ahmed

Hey! I'm Samim Ahmed (Admin of ShikhiBD). I love to write and read on the topic of current affairs. Since my childhood; I have been an expert in writing feature posts for various magazines.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *