মহানবীর (সা.) জন্ম ও এক ইহুদির ভবিষ্যদ্বাণী
মহানবীর (সা.) জন্ম ও এক ইহুদির ভবিষ্যদ্বাণী : মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মের সময় বহু অলৌকিক ঘটনা প্রকাশিত হয় যার অসংখ্য বর্ণনা হাদিস ও ইতিহাসের পাতায় মহানবীর জীবনী পাওয়া যায় ।
তাওরাত, ইঞ্জিল প্রভৃতি ঐশী গ্রন্থে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমন সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণীর উল্লেখ রয়েছে । সেই সূত্র ধরেই তাওরাত ও ইঞ্জিল কিতাবের পণ্ডিতগণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমন সম্পর্কে যেসকল আলামত প্রকাশ পাবে তা জানতেন ।
তাই তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন কবে, কখন, কোন গোত্রে ঘটবে সেই মহামানবের শুভাগমন ।
মহানবীর (সা.) জন্ম ও এক ইহুদির ভবিষ্যদ্বাণী
মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এক ইহুদি মদিনায় বাস করতো। সে সেখানে ব্যবসা-বানিজ্য করতো। মহানবীর (সা.) যে রাতে ভূমিষ্ঠ হন, সে রাতে কুরাইশ এর এক মজলিসে সে বলল, আজ রাতে কি তোমাদের কারও কোনও সন্তান জন্ম হয়েছে ? জবাবে তারা বলল, আল্লাহর কসম আমরা এ রকম কিছুই জানি না ।
ইহুদি বলল, আল্লাহু আকবার ! তোমাদের অজান্তে ঘটে থাকলে তো কোনো অসুবিধা নেই । তবে তোমরা খোঁজ করে দেখ এবং যা বলছি স্মরণ রাখোঃ এ রাতে শেষ নবী ভূমিষ্ঠ হয়েছেন । তাঁর দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে একটি চিহ্ন আছে । তাতে ঘোড়ার কেশরের মতো একগুচ্ছ চুল আছে ।
শেষ নবীর আগমন
দ’রাত তিনি দুধ পান করবেন না । কারণ একটি দুষ্টু জ্বিন তাঁর মুখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়েছে । ফলে তাঁকে দুধ পান থেকে নিবৃত্ত রাখা হয়েছে ।
শুনে লোকজন মজলিস ছেড়ে উঠে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ইহুদির কথায় তারা হতভম্ব-স্তম্ভিত হয়ে পড়ে । ঘরে গিয়ে তারা প্রত্যেকে ঘরের লোকদের এই খবরটি শোনায় । শুনে তারা বলে, হ্যাঁ আল্লাহর শপথ! আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের একটি পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে । তারা তাঁর নাম রেখেছে মুহাম্মদ ।
এবার তারা ইহুদির কথা ও এই নবজাতক সম্পর্কে কানাঘুষা করতে করতে ইহুদির কাছে যায় এবং তাকে এই খবরটি জানায় । ইহুদিটি বলল, তোমরা আমাকে নিয়ে চলো, আমি তাকে একটু দেখবো ।
এক ইহুদির ভবিষ্যদ্বাণী
লোকজন তাকে নিয়ে আমেনার ঘরে গিয়ে তাকে বলল, তোমার পুত্রটিকে একটু আমাদের কাছে দাও । আমেনা পুত্রটিকে তাদের কাছে দিয়ে দিলে তারা তার পিঠের কাপড় সরিয়ে ইহুদির বর্ণিত নিদর্শনটি দেখতে পায় । সাথে সাথে ইহুদিটি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
তার জ্ঞান ফিরলে লোকেরা তাকে জিজ্ঞেস করলো, কী ব্যপার, আপনার কী হয়েছে ? ইহুদিটি বলল, আল্লাহর শপথ ! নবুওয়ত বনী ইসরাঈল থেকে বিদায় নিল । তোমরা এতে আনন্দিত হও, হে কুরাইশের দল ! আল্লাহর শপথ, তোমাদের সহায়তায় তিনি এমন বিজয় লাভ করবেন যে, প্রাচ্যে-প্রতীচ্যে তাঁর সুসমাচার ছড়িয়ে পড়বে।
৬ মাস বাচ্চার খাবার তালিকা কি হওয়া উচিত? জানুন
বর্ণনাকারী বলেন- হাসসান ইবনে সাবিত (রা.) বলেন, তখন আমার বয়স সাত বা আট বছর। যা শুনি বা দেখি তা বুঝবার বয়স আমার হয়েছে।
হঠাৎ একদিন সকালবেলা ইয়াসরিবের(মদিনার) জনৈক ইহুদিকে চিৎকার করে বলতে শুনলাম, হে ইহুদি সমাজ ! চিৎকার শুনে লোকজন তার নিকট এসে ভীড় জমায় এবং বলে, বল কী হয়েছে তোমার ? সে বলল, আহমদ(মুহাম্মদ) নামের যে লোকটির জন্ম হওয়ার কথা, এই রাতে তার তারকা উদিত হয়েছে।”
- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং ৪৯১-৪৯২
বি.দ্র. ইহুদি লোকটি আফসোস করছিল এই জন্য যে, তাওরাত ও ইঞ্জিল কিতাবে মহানবীর আগমন বার্তা দেয়া ছিল, তাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল, শেষ নবীর আগমন তাদের বংশ অর্থাৎ বনী ইসরাঈল থেকে হবে ।
কিন্তু তা না হয়ে বনী কুরাইশ থেকে জন্ম লাভ করেছে। পরবর্তীতে তাদের অধিকাংশ লোক এটা মেনে নিতে পারেনি, ফলে নবী মুহাম্মদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরোধীতা করে, যার ধারাবাহিকতা আজ পর্যন্ত বিদ্যমান।
পড়তে পারেন: হযরত সালমান ফারসির ইসলাম গ্রহণ এর কাহিনী
ইতিহাসের পাতায় মহানবীর জীবনী স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে যতোদিন এই বিশ্বজগত কায়েম থাকবে। মহানবী সা. ছিলেন পুরো বিশ্বজাহনের জন্য রহমত স্বরূপ। তার শেখানো পথেই রয়েছে ইহলৌকিক ও পরকালীন শান্তি ও সফলতা। তাই আসুন আমরা মহানবীর জীবনী পড়ি এবং আদর্শ জীবন ও সমাজ গড়ি।