রক্তের প্লাটিলেট বৃদ্ধির উপায়
রক্তের প্লাটিলেট বৃদ্ধির উপায় জানার আগে আসুন আমরা রক্তের প্লাটিলেট সম্পর্কে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় জেনে নিই :
রক্তের প্লাটিলেট বৃদ্ধির উপায়
রক্তের প্লাটিলেট কি
প্লাটিলেট হচ্ছে রক্তের ক্ষুদ্রতম উপাদান যা রক্তপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। প্লাটিলেট একত্রে জমাট বাঁধে এবং আঘাতের স্থানে রক্তপাত প্রতিরোধ করে। প্লাটিলেটকে থ্রম্বোসাইটও বলা হয়। প্লাটিলেটকে শরীরের প্রাকৃতিক ব্যান্ডেজ বলা হয়।
শরীরে আঘাত বা অন্য কোনো কারণে শরীর থেকে রক্ত যেন বেরিয়ে না যায় সেজন্য প্লাটিলেট রক্ত জমাট বাধিয়ে ফেলে । প্লাটিলেট রক্তের সবচেয়ে হালকা উপাদান। তাই এগুলো রক্তনালীর দেয়ালে ঠেলে দেয়। ফলে রক্তপাত বন্ধের জন্য প্লাটিলেট দেয়ালের কাজ করে।
রক্তের প্লাটিলেট কি দান করা যায়?
রক্তের প্লাটিলেট সংখ্যা সুস্থ অবস্থায় সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ পর্যন্ত। এই সংখ্যা বিশ হাজারের কম হলে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ে। তখন রোগীর শরীরে রক্তের প্লাটিলেট বাড়ানোর জন্য রক্ত দান করার মতো প্লাটিলেটও দান করা যায়। একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্ত থেকে প্লাটিলেট বাছাই করে একজনের শরীর থেকে অন্যজনকে প্লাটিলেট দান করা যায়।
রক্তের প্লাটিলেট কমে গেলে কী কী সমস্যা হতে পারে
১। শরীরে রক্তের প্লাটিলেট কমে গেলে শরীরের রক্ত জমাট বাঁধতে পারেনা, ফলে শরীরের ক্ষত স্থান হতে রক্তপাত হতে থাকে।
২। এমনকি নাক, দাঁতের গোড়া, পেসাব-পায়খানার সাথে, মহিলাদের পিরিয়ডে অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে।
৩। পেশী, জয়েন্টে ব্যথা, হাত-পা ঝিমঝিম করা, পা ফুলে যাওয়া, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, মাথা ঘোরান ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪। ত্বকের নিচে রক্তপাতের ফলে ত্বকে ছোট লাল এবং বেগুনি বিন্দুর সৃষ্টি হয়।
রক্তের প্লাটিলেট বেড়ে গেলে করণীয়
আবার যদি রক্তে প্লাটিলেটের পরিমান বেড়ে যায়, তাহলে তা আপনার রক্তে অতিরিক্ত জমাট বাঁধাবে বা হার্ট এ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে ।
রক্তের প্লাটিলেট সমুন্নত রাখতে যা করতে হবে
- ১। এ্যালকোহল পরিহার করতে হবে।
- ২। ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ৩। পরিমিত এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।
- ৪। রাসায়নিক মিশ্রিত খাবার পরিহার করতে হবে।
- ৫। শরীর যাতে কেটে না যায় বা আঘাত না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
যে ৮টি খাবার রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে
১। দুধ ২। সবুজ শাক-সবজি ৩। পেঁপে পাতার রস ৪। ডালিম/আনার ৫। মিষ্টি কুমড়া ৬। আমলকি ৭। এলোভেরার নির্যাস ৮। মাংস ও কলিজা
১। দুধঃ আমরা সকলেই জানি যে. দুধ ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস যা আমাদের শরীরের হাড় ও পেশীগুলোর শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। দুধে রয়েছে ভিটামিন কে যা শরীরের রক্ত জমাট বাঁধা প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। এজন্য বলা হয়ে থাকে যে নিয়মিত দুধ পান রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা উন্নত করতে সহায়তা করে।
হযরত সালমান ফারসির ইসলাম গ্রহণ এর কাহিনী
২। সবুজ শাকসবজিঃ সবুজ শাক সবজি ভিটামিন কে এর অন্যতম উৎস । আর আমরা পূর্বেই জেনেছি যে, ভিটামিন কে শরীরের রক্ত জমাট বাঁধা প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।
৩। পেঁপে পাতার রসঃ পেঁপে পাতার রস রক্তের প্লাটিলেট বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে সুপরিচিত প্রতিকার। ডেঙ্গু জ্বরের কারণে রক্তে প্লাটিলেট কমে গেলে নিয়মিত এক গ্লাস বা দু’টি পেঁপে পাতার রস খেলে রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়তে থাকে। বহু ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এটি প্রমাণিত।
৪। ডালিম/আনারঃ ডালিম/আনারের দানাগুলো আয়রন দ্বারা পরিপূর্ণ এবং রক্তের প্লাটিলেট বাড়াতে খুবই কার্যকরী। ডালিম/আনারে আছে প্রচুর এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবয় সংক্রমনের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়াই করে।
পড়তে পারেন : সুন্দর ত্বকের যত্নে ৭টি ঘরোয়া টিপস
৫। মিষ্টি কুমড়াঃ মিষ্টি কুমড়া আশ্চর্যজনকভাবে রক্তে প্লাটিলেট বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন এ যা অস্থিমজ্জা দ্বারা উৎপাদিত প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে সাহা্য করে।
এছাড়াও ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার যেমন-গাজর, মিষ্টি আলু গর্ভাবস্থায় প্লাটিলেট বাড়ানোর একটি নিরাপদ ও প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।
৬। আমলকিঃ আমলকি হচ্ছে ভিটামিন সি এর অন্যতম উৎস যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবয় সংক্রমনের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়াই করে। নিয়মিত আমলকি খেলে রক্তের গুণগত মান উন্নত হয়।
৭। এ্যালোভেরার নির্যাসঃ ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে এ্যালোভেরার নির্যাস এ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ যা রক্তের গ্লুকোজ ও লিপিড কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্তের প্লাটিলেট বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
৮। কলিজা ও মাংসঃ কলিজা ও মাংস হচ্ছে ভিটামিন কে এর অন্যতম একটি উৎস। এটি প্লাটিলেট বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
আসুন আমরা স্বাস্থ্য সচেতন হই। রোগাক্রান্ত হয়ে ভোগার আগেই রোগ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি। এবং রক্তের প্লাটিলেট বৃদ্ধির উপায় গুলো মেনে নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করি এবং স্বাস্থ্য সচেতন হই।