খেলাধুলা

ভলিবল খেলার নিয়ম । ভলিবল কোর্টের মাপ । বিস্তারিত

ভলিবল খেলার নিয়ম । ভলিবল কোর্টের মাপ । বিস্তারিত : ভলিবল বর্তমান বিশ্বে একটি জনপ্রিয় খেলা। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই ভলিবল খেলা হয়ে থাকে। আজকের পোস্টে আমরা ভলিবল খেলার আদ্যোপান্ত জানার চেষ্টা করবো।

ভলিবল খেলার ছবি
ভলিবল খেলার দৃশ্য

ভলিবল খেলার নিয়ম । ভলিবল কোর্টের মাপ । বিস্তারিত

ভলিবল খেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের স্প্রীং ফিল্ডের ওয়াই. এম. সি. এর শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক উইলিয়াম জি মর্গান ১৮৯৫ সালে এ খেলাটি আবিষ্কার করেন। ওয়াই. এম. সি. এর মাধ্যমে ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশে খেলাটি ব্যাপকভাবে চালু হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন সেনারা ইউরোপে এ খেলাটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেন। ১৯২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিকে ভলিবলের প্রদর্শনী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে আন্তর্জাতিক ভলিবল ফেডারেশন (FIVB) গঠিত হয়।

বাংলাদেশে শহর এমনকি গ্রামাঞ্চলে ভলিবল খেলা বেশ জনপ্রিয়। সহজে আয়োজন করা যায় বলে এ দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বয়সভিত্তিক পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় ভলিবল দল এশিয়ান গেম্স এবং সাফ গেমসে অংশগ্রহণ করে। এই খেলার মাধ্যমে শারীরিক ক্ষমতা, ক্ষিপ্রতা, আত্মবিশ্বাস, সমঝোতা, পর্যবেক্ষণক্ষমতা, নেতৃত্বদান ইত্যাদি দক্ষতাগুলো শিশুরা অর্জন করে ।

ভলিবল কোর্টের মাপ

ভলিবল কোর্টের মাপ
ভলিবল কোর্টের মাপ

ক) ভলিবল কোর্ট

ভলিবল কোর্টের দৈঘ্য ১৮ মিটার ও প্রস্থ ৯ মিটার। ভলিবল কোর্টের প্রতি অর্ধের মধ্যরেখা হতে ৩ মিটার পিছনে একটি

রেখা টানতে হবে। এই ৩ মিটার অংশকে সম্মুখ জোন বলে এবং ৬ মিটার অংশকে পশ্চাৎ জোন বলা হয়। কোর্টের চারিদিকে কমপক্ষে ৩ মিটার মুক্ত এলাকা থাকবে এবং উপরের দিকে অনুভূমিক ৭ মিটার উচ্চতা মুক্ত থাকবে ।

খ) নেট বা জাল

১ মিটার চওড়া ও ৯.৫০ মিটার লম্বা ভলিবল নেটটি মধ্যরেখা বরাবর টানাতে হবে। পুরুষদের জন্য এই নেটের উচ্চতা ২.৪৩ মিটার এবং মহিলাদের জন্য উচ্চতা ২.২৪ মিটার। নেটের দুই পাশে পার্শ্বরেখা বরাবর একটি করে অ্যান্টিনা থাকবে, যার উচ্চতা হবে ১.৮০ মিটার।

ভলিবল খেলার বল
ভলিবল খেলার বল

গ) বল

বলটি অবশ্যই গোলাকার এবং চামড়া বা চামড়া জাতীয় পদার্থ দ্বারা তৈরি হতে হবে।

বলের পরিধি

: ৬৫-৬৭ সে.মি. বলের ওজন

বলের ভিতর বায়ুর চাপ : ০.৩০ হতে ০.৩২৫ কেজি

মহাসাগর কয়টি ও কি কি ? মহাসাগরের সকল তথ্য

ঘ) খেলোয়াড়

: ২৬০-২৮০ গ্রাম

প্রতি দলে ১২ জন খেলোয়াড় থাকবে কিন্তু মাঠে খেলবে ৬ জন খেলোয়াড়। বাকিরা বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে উপস্থিত থাকবে।

ঙ) জয়-পরাজয়

সেটের মাধ্যমে জয় পরাজয় নির্ধারণ করা হয়। ২৫ পয়েন্টে একটি সেট হবে। কিন্তু উভয় দলের ২৪-২৪ সমান পয়েন্ট হলে সে ক্ষেত্রে ডিউজ হবে এবং কেবলমাত্র ২ পয়েন্টের ব্যবধান হলেই সেট হবে (উদাহরণ: ২৫-২৭, ২৫-২৩ ইত্যাদি)। ৫ সেটের মধ্যে যে দল ৩ সেটে বিজয়ী হবে তাদেরকে ম্যাচ বিজয়ী বলে ধরা হবে। বেস্ট অব ফাইভ এর খেলায় যদি ৫ম সেট খেলতে হয় তবে ১৫ পয়েন্টে খেলা নিষ্পত্তি হবে। কোন দল ৮ পয়েন্ট পেলেই কোর্ট বদল করবে।

ভলিবল খেলার নিয়ম

ভলিবল সার্ভিস করার নিয়মাবলি

রেফারির বাঁশির সংকেতের ৮ সেকেণ্ডের মধ্যে সার্ভিস করতে হবে;

অবশ্যই বলটি টস করে সার্ভিস করতে হবে;

সার্ভিস জোনের মধ্যে থেকে সার্ভিস করতে হবে;

প্রান্তরেখা স্পর্শ বা অতিক্রম না করে সার্ভিস করতে হবে;

বল আড়াল না করে সার্ভিস করতে হবে;

রেফারির বাঁশির পরে বলটি বাউন্স করা যাবে না ;

রেফারির বাঁশির সংকেতের পূর্বে সার্ভিস করলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে এবং রেফারি পুনরায় সার্ভিসের নির্দেশ দিবেন।

নিম্নলিখিত নিয়মগুলো ভঙ্গ করলে সার্ভিস ও পয়েন্ট উভয় হারাবে

কোন দল তিনবারের বেশি বল স্পর্শ করলে

খেলা চলাকালীন অ্যাকশনের সময় খেলোয়াড় জাল স্পর্শ করলে

অবস্থান

বিপক্ষ দলের কোর্টের মধ্যে বল থাকাকালে বলে আঘাত করলে

খেলা চলাকালীন বিপক্ষ কোর্টে প্রবেশ করলে

ঘূর্ণন বা Rotation এর নিয়ম ভঙ্গ করলে ।

নেটের কাছের ৩ জন খেলোয়াড়কে সামনের সারির খেলোয়াড় বলা হবে এবং তাদের অবস্থান হবে সম্মুখের বাম প্রান্তে ৪ নং খেলোয়াড়, মধ্যে ৩ নং খেলোয়াড় ও ডানে ২ নং খেলোয়াড়। অন্য ৩ জন খেলোয়াড়কে পিছনের সারির খেলোয়াড় বলা হবে এবং তাদের অবস্থান হবে পিছনের সারির বামপ্রান্তে ৫ নং খেলোয়াড়, মাঝে ৬ নং খেলোয়াড় ও ডানে ১ নং খেলোয়াড়। পেছনের সারির খেলোয়াড়রা কখনোই সম্মুখ জোনে নেটের উপরের উচ্চতার বলে আঘাত বা ব্লক করতে পারবে না ।

সুখি পারিবার গঠনের ৭টি টিপস

ঘূর্ণন

ভলিবল খেলায় খেলোয়াড়রা ‘অ্যান্টি ক্লকওয়াইজ’ কোর্টে অবস্থান নেবে। কিন্তু যখন রিসিভিং দল সার্ভিস লাভ করবে তখন ঐ দলের সকল খেলোয়াড় ‘ক্লকওয়াইজ’ একবার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে। একে ঘূর্ণন বা রোটেশন বলে।

লিবারো

লিবারোহচ্ছে রক্ষণভাগের খেলায় বিশেষজ্ঞ একজন খেলোয়াড়। লিবারো খেলোয়াড়ের নাম অবশ্যই স্কোরসিটে লিপিবদ্ধ থাকবে। তার নামের পার্শ্বে কথাটি উল্লেখ থাকবে। লিবারো খেলোয়াড়ের জার্সি অবশ্যই সতীর্থ অন্যান্য খেলোয়াড়ের জার্সির রং ও ডিজাইন হতে ভিন্ন রকমের হবে। লিবারো খেলোয়ার সার্ভিস ও সার্ভিস ব্লক করতে পারবে না। কোন অবস্থানে থেকেই নেটের উচ্চতার উপরিভাগ দিয়ে বল বিপক্ষের কোর্টে পাঠাতে পারবে না। লিবারো খেলোয়াড় পিছনের সারির যে কোন খেলোয়াড়ের সাথে বদলি হতে পারবে। এই বদলি নিয়মিত বদলি হিসেবে গণ্য হবে না এবং এই বদলি অসীমিত। লিবারো খেলোয়াড় আহত হলে তার পরিবর্তে মাঠে নামা বদলী খেলোয়াড় উক্ত ম্যাচের অবশিষ্ঠ সময়ের জন্য “লিবারো” খেলোয়াড় হিসেবে বা রক্ষণ ভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলবে। লিবারো খেলোয়াড় দলীয় অধিনায়ক (Team Captain) অথবা খেলার অধিনায়ক (Game Captain) হতে পারবে না।

আন্ডার আর্ম সার্ভিস

এই সার্ভিসটি খুব সহজ, বাম হাতে বল নিয়ে দুই পা কিছুটা ফাঁকা করে সামনের দিকে হাঁটু কিছুটা ভাঁজ করে দাঁড়াতে হবে। বলটি টস করে ডান হাত দিয়ে আঘাত করতে হবে এবং সাথে সাথে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে।

ওভার হ্যান্ড বা টেনিস সার্ভিস

প্রতিযোগিতামুলক কোন খেলায় এই সার্ভিস করা হয়। কঠিন হলেও এই সার্ভিসের দ্বারা লক্ষ্যস্থলে বল পৌছানো সহজ। দুই পা সামান্য ফাঁকা করে দাঁড়িয়ে বল উচুতে নিক্ষেপ করে নিম্নগামী হওয়ার সাথে সাথে ডান হাতের মুষ্টি বা তালুর গোড়ালি দিয়ে আঘাত করতে হবে। সার্ভিস করার সাথে সাথে সামনে অগ্রসর হতে হবে।

পাস:

ভলিবল খেলায় বিভিন্ন ধরনের পাস করা যায়, যেমন-

ক) আপার হ্যান্ড পাস

বলকে সব সময় আঙুলের প্রথম গাঁট ও শেষ প্রান্তের মাঝখানের অংশ দ্বারা স্পর্শ করতে হবে। কনুই দুটো কাঁধ বরাবর রাখতে হবে, যাতে ঠিক কপালের সামনে থেকে খেলা যায়। হাঁটু সামান্য ভেঙে দুই পায়ের উপর ভর রেখে সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে দাঁড়াতে হবে। বলের ঠিক পেছনে ও নিচের দিকে আঘাত করে সামনে উপরের দিকে ঠেলে দিতে হবে এবং হাঁটু সোজা করে দাঁড়াতে হবে।

খ) আন্ডার আর্ম পাস

বুড়ো আঙুল বাদে বাম হাতের অন্যান্য আঙুলগুলোর উপর ডান হাতের আঙুলগুলো রেখে তার উপর দুই হাতের বুড়ো আঙুল দুটোকে পাশাপাশি রাখতে হবে। কনুই দুটোকে এমনভাবে রাখতে হবে, যাতে কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত হাতের অংশটা পাশাপাশি থাকে। দুই হাঁটু সামান্য ভেঙে কোমর নিচু করে শরীরকে বলের নিচে নিয়ে যেতে হবে। কনুই এর কিছুটা সামনে থেকে কব্জি পর্যন্ত অংশ দিয়ে বলকে উপরে ওঠাতে হবে এবং শরীর সোজা করতে হবে।

এক হাতের নিচে দিয়ে বল পাস বলের এমন অবস্থা যাতে মনে হয় বলটি মাটিতে পড়ে যাবে। কোন রকম দুই হাত ব্যবহার করা যাবে না । এমতাবস্থায় এক বাহু মুষ্টিবদ্ধ করে বল ঠেকাবার চেষ্টা করা বা এক হাতে বল পাস করা।

বল স্ম্যাশ করা

ভলিবল খেলায় যিনি চাপ মারেন বা স্ম্যাশ করেন তাঁর ভূমিকা একটু বেশি। লম্বা খেলোয়াড়রা চাপ মারতে কুশলী হয়। যে খেলোয়াড়রা লাফ দিয়ে উঠতে পারে তারা চাপ মারতে পারে। এক পায়ে ভর করে লাফ দিয়ে জালের উপর থেকে মুষ্টিবদ্ধ হাত বা হাতের গোড়া থেকে সজোরে আঘাত করতে হবে।

ব্লক করা

লম্বা খেলোয়াড় হলে চাপের বল বাধা দিতে সুবিধা হয়। সময়মত লাফ দেওয়া ব্লকিং এর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। চাপ দানকারী যখন বলে আঘাত করার জন্য লাফ দিবেন তার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আপনি লাফ দিন। আপনার দুই হাত জালের উপরে তুলে দিন। আঙুলগুলো খোলা অবস্থায় বাধা দিন। ব্লক একাকী বা দুই/তিন জনে দেওয়া যায়।

ভলিবল খেলার নিয়ম । ভলিবল কোর্টের মাপ । বিস্তারিত- পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগলেই আমাদের শ্রম স্বার্থক হবে। ভলিবল সংক্রান্ত আরও তথ্য পেতে উইকিপিডিয়া থেকে পড়তে পারেন। পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্টবক্সে আপনার মূল্যবান মন্তব্য জানাবেন। ধন্যবাদ।

Samim Ahmed

Hey! I'm Samim Ahmed (Admin of ShikhiBD). I love to write and read on the topic of current affairs. Since my childhood; I have been an expert in writing feature posts for various magazines.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *