সমসাময়িকসুস্বাস্থ্য

মাশরুম চাষ পদ্ধতি । মাশরুম এর উপকারিতা ও লাভ

মাশরুম চাষ পদ্ধতি । মাশরুম এর উপকারিতা ও লাভ : বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে চাষ করা যায় মিল্কি, ঋষি ও স্ট্র মাশরুম এবং শীতকালে শীতাকে, বাটন, শিমাজি ও ইনোকি মাশরুম । বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয় বারোমাসি ওয়েস্টার মাশরুম । বিভিন্ন ধরনের মাশরুম চাষে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে । আমরা এ পাঠে ওয়েস্টার মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানব ।

মাশরুম এর ছবি
মাশরুম এর ছবি

মাশরুম চাষ পদ্ধতি । মাশরুম এর উপকারিতা ও লাভ

মাশরুম এর উপকারিতা

আমরা জানি ছত্রাক ফসলের অনেক রোগের জন্য দায়ী । কিন্তু সব ছত্রাক রোগ সৃষ্টি করে না। অনেক ছত্রাক রয়েছে যারা আমাদের জন্য উপকারী । মাশরুম এমন এক ধরনের ছত্রাক যা সম্পূর্ণ খাওয়ার উপযোগী, পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধি গুণ সম্পন্ন । আসলে মাশরুম এক ধরনের মৃতজীবী ছত্রাকের ফলন্ত অঙ্গ যা ভক্ষণযোগ্য ।

অনেকে ভুল করে মাশরুম ও ব্যাঙের ছাতাকে এক জিনিস মনে করে। ব্যাঙের ছাতা প্রাকৃতিকভাবে যত্রতত্র গজিয়ে উঠা বিষাক্ত ছত্রাকের ফলন্ত অঙ্গ । আর মাশরুম টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে উৎপন্ন বীজ দ্বারা পরিচ্ছন্ন পরিবেশে চাষ করা সবজি ।

১। মাশরুম এর পুষ্টিগুণ

মাশরুম নিজে সুস্বাদু খাবার এবং অন্য খাবারের সাথে ব্যবহার করলে তার স্বাদও বাড়িয়ে দেয় । মাশরুমের স্বাদ মাংসের মতো। মাশরুম দিয়ে চায়নিজ ও পাঁচতারা হোটেলে নানা রকম মুখরোচক খাবার তৈরি করা হয় । তবে দেশীয় পদ্ধতিতে মাশরুম সবজি, ফ্রাই, স্যুপ, পোলাও, বিরিয়ানি, নুডুলস, চিংড়ি ও ছোট মাছের সাথে ব্যবহার করা যায় । মাশরুম তাজা, শুকনা বা গুঁড়া হিসেবে খাওয়া যায় ।

পুষ্টিমান বিচারে মাশরুম সবার সেরা ফসল । কারণ মাশরুমে অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদান, যেমন- প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলস অতি উচ্চ মাত্রায় আছে । প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনা মাশরুমে ২৫-৩৫ গ্রাম আমিষ, ১০-১৫ গ্রাম সব ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলস, ৪০-৫০ গ্রাম শর্করা ও আঁশ এবং ৪-৬ গ্রাম চর্বি আছে । মাশরুমের আমিষ অত্যন্ত উন্নত মানের। এ আমিষে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় ৯টি এমাইনো এসিডই আছে ।

আমিষ গ্রহণে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও মেদভুঁড়ি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না । কারণ আমিষের সাথে ক্ষতিকর চর্বি থাকে না । পক্ষান্তরে মাশরুমের চর্বি হাড় ও দাঁত তৈরিতে এবং ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে । মাশরুমের শর্করায় অনেক ধরনের রাসায়নিক উপাদান থাকে যা অনেক জটিল রোগ নিরাময়ে কাজ করে ।

এবং অত্যন্ত অল্প সময়ে অর্থাৎ ৭-১০ দিনের মধ্যে ফলানো যায় । বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাশরুম চাষের অত্যন্ত উপযোগী। মাশরুম চাষের উপকরণ, যেমন—খড়, কাঠের গুড়া, আখের ছোবড়া, পচা পাতা ইত্যাদি সস্তা ও সহজলভ্য ।

বাছাইকৃত সেরা ৫০ টি ইসলামিক উক্তি ও মণীষীদের বাণী

২। মাশরুম চাষ করে আয়

মাশরুম চাষ ব্যবসায়িক দিক থেকে খুবই লাভজনক । কারণ মাশরুম চাষে কম পুঁজি, কম শ্রম দরকার হয় । অল্প দিনের মধ্যে বিনিয়োগকৃত অর্থ তুলে আনা যায় । অন্যদিকে একক জায়গায় অধিক ফলন, লাভজনক বাজারমূল্য পাওয়া যায় । তাই মাশরুম চাষ করে বেকার যুবসমাজ সহজেই আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে । ঘরে ঘরে মাশরুম চাষ করে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা যেমন মেটানো যাবে তেমনি বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে ।

৩। মাশরুম এর স্বাস্থ্য উপকারিতা :

ভিটামিন ও মিনারেল দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে । আমাদের দেহের জন্য দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা রয়েছে । আমরা প্রতিদিন মাশরুম খাওয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা মেটাতে পারি। মাশরুমে থায়ামিন (বি ১), রিবোফ্লাবিন (বি ২), নায়াসিন ইত্যাদি ভিটামিন এবং ফসফরাস, লৌহ, ক্যালসিয়াম, কপার ইত্যাদি মিনারেল প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। পুষ্টিগুণের কারণে মাশরুম অনেক রোগের প্রতিরোধক ও নিরাময়কারী হিসেবে কাজ করে, যেমন- ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তশূন্যতা, আমাশয়, চুল পড়া, ক্যান্সার, টিউমার ইত্যাদি ।

একজন সুস্থ লোকের প্রতিদিন ২০০-২৫০ গ্রাম সবজি খাওয়া প্রয়োজন । আমরা প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ গ্রাম (আলু বাদে) সবজি খাই । যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। ফলে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলের অভাবে বিভিন্ন রোগে ভুগে থাকি। বাংলাদেশে দ্রুত চাষযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে । অধিকাংশ জমি ধান চাষে ব্যবহৃত হয় । সবজি চাষের আওতায় জমির পরিমাণ বাড়ানো কঠিন । এমতাবস্থায় মাশরুম হতে পারে আদর্শ ফসল । মাশরুম এমন একটি ফসল যা চাষ করার জন্য কোনো উর্বর জমির প্রয়োজন নেই। ঘরের মধ্যে তাকের উপর রেখেও চাষ করা যায়।

চুল পড়ার কারণ । চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

মাশরুমের বীজ বা স্পন তৈরি : মাশরুমের বীজ ল্যাবরেটরিতে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদন করা হয় । চাষি পর্যায়ে মাশরুম চাষের জন্য প্যাকেটজাত বীজ কিনতে পাওয়া যায় যাকে বাণিজ্যিক স্পন বলে । আবার খড় দিয়ে চাষিরা নিজেরাও স্পন তৈরি করে নিতে পারেন । সে ক্ষেত্রে চাষিদেরকে বাজার থেকে মাদার স্পন সংগ্রহ করে স্পন তৈরি করে নিতে হয় ।

চাষঘর তৈরি : মাশরুম চাষের ঘরটিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন প্রবেশের জন্য জানালা রাখতে হবে । ঘরটিতে আবছা আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। ঘরের তাপমাত্রা ২০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। মাশরুম আর্দ্র অবস্থা পছন্দ করে । ঘরটিতে ৭০-৮০% আপেক্ষিক আর্দ্রতার ব্যবস্থা করতে হবে । মাশরুম চাষ ঘরে অসংখ্য অনুজীবের শ্বাস-প্রশ্বাসের ফলে প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয় । কার্বন ডাই অক্সাইড ভারী বলে নিচের দিকে জমা হয় । এজন্য বেড়ার নিচে খোলা রাখতে হয় ।

স্পন সংগ্রহ : চাষঘর তৈরির পর বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে পলি প্যাকেটে তৈরি স্পন সংগ্রহ করতে হবে । ভালো স্পনের বৈশিষ্ট্য হলো প্যাকেটটি সুষমভাবে মাইসিলিয়াম দ্বারা পূর্ণ ও সাদা হবে । স্পন সংগ্রহের পর তাড়াতাড়ি প্যাকেট কাটার ব্যবস্থা করতে হবে । কাটতে দেরি হলে বস্তা থেকে প্যাকেট বের করে আলাদা আলাদা জায়গায় ঘরের ঠাণ্ডা স্থানে রাখতে হবে ।

প্যাকেট কর্তন : চাষঘরে বসানোর আগে স্পন প্যাকেট সঠিক নিয়মে কেটে চেঁছে পানিতে চুবিয়ে নেওয়া প্রয়োজন । স্পন প্যাকেটের কোনাযুক্ত দুই কাঁধ বরাবর প্রতি কাঁধে ২ ইঞ্চি লম্বা এবং ১ ইঞ্চি ব্যাস করে কাটতে হবে । উভয় পার্শ্বের এ কাটা জায়গার সাদা অংশ ব্লেড দিয়ে চেঁছে ফেলতে হবে । এবার প্যাকেটটি ৫-১৫ মিনিট পানিতে উপুড় করে চুবিয়ে নিতে হবে। চুবানোর পর পানি ভালোভাবে ঝরিয়ে সরাসরি চাষঘরের মেঝেতে অথবা তাকে সারি করে সাজিয়ে চাষ করতে হবে ।

পরিচর্যা : চাষঘরের মেঝে বা তাকে দুই ইঞ্চি পর পর স্পন সাজাতে হবে। স্পন প্যাকেটের চারপাশের আর্দ্রতা ৭০-৮০% রাখার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী গরমে ৪-৫ বার, শীতে বা বর্ষায় ২-৩ বার পানি স্প্রে করতে হবে । স্প্রেয়ারের নজল প্যাকেটের এক ফুট ওপরে রেখে স্প্রে করতে হবে । আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পন প্যাকেটের উপর কখনো খবরের কাগজ ভিজিয়ে, কখনো বস্তা ভিজিয়ে একটু উঁচু করে রাখতে হবে ।

অন্যান্য পরিচর্যা : পরিচর্যা ঠিকমতো হলে ২-৩ দিনের মধ্যে মাশরুমের অঙ্কুর পিনের মতো বের হবে । প্রতি পার্শ্বে ৮-১২টি বড় অঙ্কুর রেখে ছোটগুলো কেটে ফেলতে হবে । ৫-৭ দিনের মধ্যে মাশরুম তোলার উপযোগী হবে । প্রথমবার মাশরুম তোলার পর একদিন বিশ্রাম অবস্থায় রাখতে হবে । পরের দিন আগের কাটা অংশে পুনরায় ব্লেড দিয়ে চেঁছে ফেলে পানি স্প্রে করতে হবে । একটি প্যাকেট থেকে ৮-১০ বার মাশরুম সংগ্রহ করা যায় । এতে একটি প্যাকেট থেকে ২০০-২৫০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যাবে ।

মাশরুম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ : মাশরুম যথেষ্ট বড় হয়েছে কিন্তু শিরাগুলো ঢিলা হয়নি— এমন অবস্থায় হাত দিয়ে আলতো করে টেনে তুলতে হবে । পরে গোড়া কেটে বাছাই করে পলি ব্যাগে ভরে মুখ বন্ধ করে বাজারজাত করতে হবে । এগুলো ঠাণ্ডা জায়গায় ২-৩ দিন রেখে খাওয়া যায় । ফ্রিজে রাখলে ৭-৮ দিন ভালো থাকে ।

মাশরুম চাষের ট্রেইনিং কোথায় হয় তা জানতে বাংলাদেশ মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট এর ওয়েবসাইটে দেখতে পারেন।

মাশরুম চাষ পদ্ধতি । মাশরুম এর উপকারিতা ও লাভ : পোস্টটি সম্পর্কে আপনাদের মূল্যবান মতামত কমেন্টবক্সে জানাতে পারেন । ধন্যবাদ।

Samim Ahmed

Hey! I'm Samim Ahmed (Admin of ShikhiBD). I love to write and read on the topic of current affairs. Since my childhood; I have been an expert in writing feature posts for various magazines.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *