সুস্বাস্থ্যলেখাপড়া

আনারস চাষ পদ্ধতি ও আনারসের উপকারিতা

আনারস চাষ পদ্ধতি ও আনারসের উপকারিতা : বাংলাদেশে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আনারস চাষ করা হয় । সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং টাঙ্গাইলের মধুপুরে ব্যাপক আনারসের চাষ হয়। ঢাকা, নরসিংদী, কুমিল্লা, দিনাজপুর জেলাতেও প্রচুর আনারস জন্মে । তবে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার (জুস, জ্যাম, জেলি ইত্যাদি) তৈরির কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে পৃথিবীর সর্বত্রই আনারসের একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

বাণিজ্যিক ফল হিসাবেও আন্তর্জাতিক বাজারে আনারস একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল। বর্তমানে বাংলাদেশে এটি একটি অর্থকরী ফসল । আনারস রপ্তানিপণ্য হিসাবে আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ অবদান রাখছে।

আনারসের ক্ষেত
আনারসের ক্ষেত

আনারস চাষ পদ্ধতি ও আনারসের উপকারিতা

আনারসের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পূর্বে আমরা জেনে নেবো আনারস খাওয়াও উপকারিতা কি কি এবং আনারসের অপকারিতা আছে কিনা। চলুন আমরা জেনে নিই –

আনারস খাওয়ার উপকারিতা

আনারসের রয়েছে অসাধারণ পুষ্টিগুণ এবং অসংখ্য উপকারিতা। যেমন-

১। উচ্চ পুষ্টিগুণঃ আনারসে ক্যালোরির পরিমাণ কম হলেও এতে উচ্চমাত্রার পুষ্টিগুণ রয়েছে। এক কাপ (১৬৫ গ্রাম) আনারসের জুসে রয়েছে :

১। ক্যালোরি ৮২.৫ কিলোক্যালোরি

২। প্রোটিন ০.৮৯১ গ্রাম

৩। কার্বোহাইড্রেট ২১.৬ গ্রাম।

৪। ফাইবার ২.৩১ গ্রাম।

৫। ভিটামিন সি ৭৮.৯ মিলিগ্রাম

৬। ম্যাঙ্গানিজ ১.৫৩ মিলিগ্রাম।

৭। ভিটামিন বি৬ ০.১৮৬ মিলিগ্রাম

৮। কপার ০.১৮১ মিলিগ্রাম

৯। থায়ামিন ০.১৩ মিলিগ্রাম

১০। পটাশিয়াম ১৮০ মিলিগ্রাম

১১। ম্যাগনেশিয়াম ১৯.৮ মিলিগ্রাম

১২। নিয়াসিন ০.৮২৫ মিলিগ্রাম

১৩। রিবোফ্লাভিন ০.০৫৩ মিলিগ্রাম

১৪। আয়রন ০.৪৭৮ মিলিগ্রাম।

এছাড়াও জাতভেদে কিছু পরিমাণ ফসফরাস, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ ও ভিটামিন কে রয়েছে।

২। এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট  : আনারসে কেবল পুষ্টিগুণ রয়েছে তাইই নয়। বরং এতে আছে এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ, রোগ প্রতিরোধ দূর্বলতা, হৃদরোগ ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

৩। হজমে সাহায্য করেঃ আনারসে রয়েছে ফাইবার এবং ব্রোমেলাইন নামক পাচক এনজাইমের একটি গ্রুপ যা খাদ্য হজমে সাহায্য করে।

৪। ক্যানন্সারের ঝুঁকি কমায় : কিছু গবেষণায় দেখা গেছে আনারসে ব্রোমেলেন এর যৌগগুলো অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে এবং ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে ।

৫। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ আনারস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । আনারসে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ এবং এনজাইমের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । এসব উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায্য করে ।

৬। আর্থ্রাইটিস রোগের চিকিৎসা : আনারসের অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যড়ুলো প্রদাহজনিত আর্থ্রাইটিস এর ব্যথা উপশমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৭। অস্ত্রপোচারের ক্ষত কমায় : আনারস অস্ত্রপোচারের কারণে সৃষ্ট ক্ষত, প্রদাহ, ফোলা ভাব ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

আনারসের অপকারিতা

আনারসের অপকারিতা নেই বললেই চলে। তবে যাদের এলার্জি রয়েছে তাদের আনারস কম খাওয়া উচিত ।

কেউ কেউ বলে থাকেন আনারস খেলে জিহ্বা জ্বালা, চুলকানি বমি বমি ভাব বায়রিয়া হতে পারে। এটা সার্বজনীন সত্য নয়। ব্যক্তিবিশেষের শারীরিক ত্রুটির কারণে কারো কারো ক্ষেত্রে হতে পারে। সার্বিকভাবে আনারস খেলে এসব সমস্যা হয় এটা প্রমাণিত নয়।

আনারস চাষ পদ্ধতি

এবার আমরা আনারস চাষ করার পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে জানবোঃ

আনারসের জাত : বাংলাদেশে আনারসের তিনটি জাত দেখা যায়। যথা : হানিকুইন, জায়েন্ট কিউ ও ঘোড়াশাল ।

আনারসের উৎপাদন প্রযুক্তি : আনারসের প্রযুক্তিগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো

মাটি ও জমি তৈরি

দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি আনারস উৎপাদনের জন্য ভালো। জমি চাষ ও মই এমনভাবে দিতে হবে যাতে মাটি ঝুরঝুরা ও সমতল হয় এবং জমিতে বৃষ্টির পানি জমে না থাকে। চারা রোপণের জন্য চাষকৃত জমিতে ১৫ সেমি উঁচু এবং ১ মিটার প্রশস্ত বেড তৈরি করতে হবে। এক বেড থেকে আর এক বেডের দূরত্ব হবে ৫০-১০০ সেমি। পাহাড়ের ঢালে আনারস চাষ করার জন্য এমন জমি নির্বাচন করতে হবে যা বেশি খাড়া নয় । পাহাড়ের ঢালু জমি কোনোক্রমেই চাষ বা কোদাল দিয়ে মাটি আলগা করা যাবে না, শুধু আগাছা ভালোভাবে পরিষ্কার করে চারা রোপণের উপযোগী করতে হবে।

হজ কাকে বলে । হজের ফরজ কয়টি । হজের ওয়াজিব কয়টি

চারা নির্বাচন ও তৈরি

আনারস গাছের বংশবিস্তার অঙ্গজ পদ্ধতিতেই হয়ে থাকে। আনারস গাছে সাধারণত চার ধরনের চারা উৎপন্ন হয় যাদেরকে সাকার বা তেউড় বলা হয় । সাকার বা তেউড়ের বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলো :

১। ফলের মাথায় দুই ধরনের চারা উৎপন্ন হয়। ফলের মাথায় সোজাভাবে যে চারাটি উৎপন্ন হয় তাকে মুকুট চারা বলে । আর মুকুট চারার গোড়া থেকে যে চারা বের হয় তাকে স্কন্ধ চারা বা মুকুট স্লিপ বলে ।

২। ফলের গোড়া বা বোঁটার উপর থেকে যে বের হয় তাকে বোঁটা চারা বলে ।

৩। বোঁটার নিচে কিন্তু মাটির উপরে কাণ্ড থেকে যে চারা বের হয় তাকে পার্শ্বচারা বা কাণ্ডের কেকড়ি বলে।

৪। গাছের গোড়া থেকে মাটি ভেদ করে যে চারা বের হয় তাকে গোড়ার কেকড়ি বা ভূঁয়ে চারা বলে । আনারস চাষের জন্য ভূঁয়ে চারা ও পার্শ্বচারা সবচেয়ে ভালো ।

আনারসের চারার ছবি
আনারসের চারার ছবি

চারা রোপণ

মধ্য আশ্বিন হতে মধ্য অগ্রহায়ণ পর্যন্ত এই এক মাস আনারসের চারা রোপণের সঠিক সময়। সেচের ব্যবস্থা থাকলে চারা রোপণের সময় আরও এক / দেড় মাস পিছানো যায়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪০ সেমি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০-৪০ সেমি বজায় রেখে চারা রোপণ করতে হবে ।

আনারসে সার প্রয়োগ পদ্ধতি : ১। সার প্রয়োগ পদ্ধতির প্রথম কাজ হলো পরিমাণ নির্ধারণ। আনারসের জন্য গাছ প্রতি নিম্নোক্ত হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।

সারের নামগাছ প্রতি সারের পরিমাণ (গ্রাম)
পচা গোবর২৯০-৩১০
ইউরিয়া৩০-৩৬
টিএসপি১০-১৫
এমওপি২৫-৩৫
জিপসাম১০-১৫

২। ক) গোবর, টিএসপি ও জিপসাম বেড তৈরির সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে ।

(খ) ইউরিয়া ও এমওপি (পটাশ) চারার বয়স ৪-৫ মাস হলে ৫ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। সার ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে ।

চুল পড়ার কারণ । চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা

শুষ্ক মৌসুমে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি নিকাশের জন্য নালা কেটে দিতে হবে । চারা অতি লম্বা হলে ৩০ সেমি রেখে আগার পাতা সমান করে কেটে দিতে হবে । আনারসের জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। আনারস ফসলে তেমন কোনো ক্ষতিকর পোকামাকড় ও রোগ সহজে আক্রমণ করে না । তাই বালাই ব্যবস্থাপনা আলোচনা করা হলো না ।

ফল সংগ্রহ

চারার বয়স ১৫/১৬ মাস হলে মাঘ মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত সময়ে আনারসের ফুল আসা শুরু করে । জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত সময়ে আনারস পাকে । গাছ থেকে আনারসের বোঁটা কেটে সংগ্রহ করতে হবে ।

ফলন

প্রতি হেক্টরে হানিকুইন ২০-২৫ টন এবং জায়েন্ট কিউ ৩০-৪০ টন ফলন দিয়ে থাকে ।

আনারস সম্পর্কে আরও জানতে পারেন উইকিপিডিয়া থেকে। ধন্যবাদ।

Samim Ahmed

Hey! I'm Samim Ahmed (Admin of ShikhiBD). I love to write and read on the topic of current affairs. Since my childhood; I have been an expert in writing feature posts for various magazines.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *