পুঁইশাক চাষ পদ্ধতি । পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা
![পুঁইশাক চাষ পদ্ধতি । পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা](https://shikhibd.com/wp-content/uploads/2024/10/Untitled-design-60.png)
পুঁইশাক চাষ পদ্ধতি । পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা : পুঁইশাক বাংলাদেশের প্রধান গ্রীষ্মকালীন পাতাজাতীয় সবজি, তবে সারা বছর ধরেই পাওয়া যায় । এতে ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। পুঁইশাক সাধারণত বসতবাড়ির আঙিনার বেড়ায় বা মাচায় জন্মাতে দেখা যায় । এছাড়া ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চাষ করা হয় ।
![পুঁইশাকের ছবি](https://shikhibd.com/wp-content/uploads/2024/10/পুঁইশাকের-ছবি.png)
পুঁইশাক চাষ পদ্ধতি । পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা
পুঁইশাকের উপকারিতা :
পুঁইশাকের চাষ পদ্ধতি জানার আগে আমরা জেনে নেবো পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা কী কী :
পুঁইশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, সি, এ। এছাড়াও রয়েছে ক্যালসিয়াম ও আয়রন। ক্যালসিয়াম ও আয়রন আমাদের শরীরের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় এবং ভিটামিন আমাদের বিভিন্ন রোগ মুক্তিতে সাহায্য করে। এছাড়া ফলিক এসিড, পটাশিয়াম, জিঙ্ক সহ বিভিন্ন খনিজ উপাদান ও রয়েছে পুঁই শাকে।
১। লিপোইক এসিড নামক অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট পুঁইশাকে আছে যা রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায় এবং ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে। ফলে পুঁইশাক ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
২। পুঁইশাকে থাকা ফাইবার পাকস্থলী ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম ভূমিকা পালন করে। কোষ্ঠকাঠিন্য হতে দেয় না এবং শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। ফলে বদহজম হয় না।
৩। পুঁইশাকে থাকা বিটা ক্যারোটিন সহজে অ্যাজমা হতে দেয় না এবং পটাশিয়ামের ভালো উৎস হওয়ায় ব্লাড প্রেশার কমায়। এছাড়া শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখে।
৪। পুঁইশাক ভিটামিন কে এর খুব ভালো একটি উৎস। ভিটামিন কে হাড়ের ম্যাট্রিক্স প্রোটিন উন্নত করে। ক্যালসিয়াম এর ধারণ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ইউরিনে ক্যালসিয়াম এর মাত্রাও কম করে। হাড়ের শক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে পুঁইশাক বেশ কার্যকর।
৫। ত্বকের কোষ কোলাজিনের জন্য যে ভিটামিন সি দরকার সেই ভিটামিন সি এর উৎস হল পুঁইশাক। পুঁইশাকে থাকা ভিটামিন এ ত্বকের এবং স্ক্যাল্পের তেল নিঃসরণ করে ময়েশ্চার ধরে রাখে। ফলে ব্রণ হয় না।
৬। শিশুদের বেড়ে উঠার জন্য ভিটামিন, প্রোটিন, মিনারেল সবই পুঁইশাকে পাওয়া যায়। ফলে শিশুদের বেড়ে উঠায় পুঁইশাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৭। পুঁইশাকে থাকা বিটা ক্যারোটিন, লুটেইন চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে খুবই দরকারি। লুটেইন থাকে ম্যাকুলায় যা রেটিনার একটি অংশ এবং অতিরিক্ত আলোর প্রভাব থেকে চোখ কে ভালো রাখে। ম্যাকুলার ডিজেনারেশন থেকেও চোখকে রক্ষা করে।
৮। পুঁইশাকে থাকা ম্যাগনেসিয়াম শরীরের এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া পুঁইশাক ফোলেটের ভালো উৎস ফলে খাবারকে সহজে এনার্জি তে রূপান্তরিত করতে পারে।
পুঁইশাকের জাত : পুঁইশাকের দুইটি জাতের চাষ হয়ে থাকে। যথা- ক) লাল পুঁইশাক : পাতা ও কাণ্ড লালচে। খ) সবুজ পুঁইশাক : পাতা ও কাণ্ড সবুজ । এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত ২টি জাত আছে । যেমন বারি-১, বারি-২ ।
পুঁইশাক চাষের উপযুক্ত সময়
সাধারণত মার্চ-এপ্রিল বা চৈত্র মাস পুঁইশাক লাগানোর ভালো সময়।
তবে সেচের সুবিধা থাকলে ফাল্গুন মাস হতেই এর চাষ করা যেতে পারে। চারা রোপণের পূর্বে জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে ঝুরঝুরা করে তৈরি করে নিতে হবে। এ সবজি চাষের জন্য উর্বর বেলে-দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি উত্তম ।
শহীদ মিনার-জাতীয় পতাকা ও স্মৃতিসৌধ অংকন পদ্ধতি
পুঁইশাকে সার প্রয়োগের নিয়ম
পুঁইশাক চাষে গোবর বা কমপোস্ট সার ব্যবহার করা ভালো । এতে মাটির গুণাগুণ বজায় থাকবে ও পরিবেশ রক্ষা হবে। পুঁইশাকের জন্য প্রতি শতকে বা ৪০ বর্গমিটার জমিতে নিম্নরূপ সার ব্যবহার করতে হবে।
সারের নাম | শতক প্রতি |
গোবর | ৪০ কেজি |
ইউরিয়া | ১ কেজি |
টিএসপি | ৫০০ গ্রাম |
এমওপি | ৫০০ গ্রাম |
বীজ বপন ও চারা রোপণ
ক) ইউরিয়া ছাড়া সব সার জমির শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হয়। তবে গোবর জমি তৈরির প্রথম দিকে প্রয়োগ করাই উত্তম ।
ইউরিয়া সার চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর থেকে ১০-১২ দিন পরপর ২-৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে ।
মার্চ-এপ্রিল মাসে পুঁইশাকের বীজ বপন করতে হয় । বীজ ও শাখা কলম দিয়ে পুঁইয়ের চাষ করা যায়। তবে বীজ দিয়ে চারা তৈরি করে এবং তা রোপণ করে চাষ করাই ভালো। পুঁইশাকের চারা ৬০-৮০ সেমি দূরে দূরে সারি করে ও সারিতে ৫০ সেমি দূরে দূরে রোপণ করতে হবে। বর্ষার সময় পুঁইশাকের লতার কিছু অংশ কেটে মাটিতে রোপণ করা যায় ।
যাকাত শব্দের অর্থ কি। যাকাতের খাত কয়টি। যাকাতের নিসাব কি
পুঁইশাক গাছের পরিচর্যা
নিড়ানি দিয়ে জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। খরার সময় নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। সেচের পর নিড়ানি দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে । জমিতে যাতে পানি না জমে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পোকামাকড়
এ শাকের ক্ষতিকর পোকার মধ্যে শুঁয়োপোকা উল্লেখযোগ্য। এ পোকা গাছের পাতা, কচি ডগা খেয়ে ক্ষতি করে থাকে ।
ফসল সংগ্রহ ও ফলন
পুঁইশাকের ডগা লম্বা হতে শুরু করলেই ডগা কেটে সংগ্রহ করতে হবে। এভাবে ডগা কেটে সংগ্রহ করলে নতুন ডগা গজাবে । নতুন ডগা কয়েকবার কেটে ফসল সংগ্রহ করা যায়। ভালোভাবে চাষ করলে প্রতি শতকে ১৩০-১৫০ কেজি পুঁইশাকের ফলন পাওয়া যায় ।
পুঁইশাক চাষ পদ্ধতি ও পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা আরও জানতে পারেন উইকিপিডিয়া থেকেও । ধন্যবাদ ।