ইসলামিক পোস্ট

মহানবীর সিরিয়া সফর ও পাদ্রী বাহীরার কাহিনী

মহানবীর সিরিয়া সফর ও পাদ্রী বাহীরার ভবিষ্যদ্বাণী : মহানবীর চাচা আবু তালিব এর সংসার অসচ্ছল ছিল । মহানবীকে তিনি এতো বেশি আদর করতেন যে নিজের সন্তানদেরও এতো আদর করতেন না । মহানবীকে পাশে নিয়ে ঘুমাতেন, বাইরো কোথাও গেলে তাঁকেও সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন । খাবার খেতে বসলে তাঁকে সাথে নিয়ে খেতেন আর বলতেন, তুমি বড় বরকতময় !

মহানবীর সিরিয়া সফর ও পাদ্রী বাহীরার কাহিনী
মহানবীর সিরিয়া সফর ও পাদ্রী বাহীরার কাহিনী

মহানবীর সিরিয়া সফর ও পাদ্রী বাহীরার কাহিনী

ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেন, আবু তালিব বাণিজ্য উপলক্ষ্যে একটি কাফেলার সঙ্গে সিরিয়া রওয়ানা হন। প্রস্তুতি সম্পন্ন করে যেইমাত্র তিনি রওয়ানা হবেন, ঠিক তখনই রাসূলুল্লাহ(সা.) তাঁকে জড়িয়ে ধরেন এবং চাচার সাথে যেতে বায়না করেন । এতে তাঁর প্রতি আবু তালিবের মন বিগলিত হয়ে পড়ে এবং বলে ওঠেন, আল্লাহর শপথ ! একে আমি সঙ্গে করে নিয়ে যাবো। আমিও তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হবো না এবং সেও আমার থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হবে না ।

এরপর রাসূলুল্লাহ(সা.)কে সঙ্গে নিয়ে আবু তালিব রওয়ানা হন। কাফেলা সিরিয়ার বুসরা নামক স্থানে যাত্রা বিরতি করে। সেখানকার একটি গির্জায় এক পাদ্রী অবস্থান করতেন। তাঁর নাম ছিল বাহীরা।

খ্রিস্টান ধর্মের তিনি বড় পণ্ডিত ছিলেন ।পাদ্রীত্ব গ্রহণ অবধি তিনি ঐ গির্জায়ই সব সময় থাকতেন। খ্রিস্টানদের ধারণা মতে, তিনিই ছিলেন তৎকালীন সময়ের খ্রিস্টীয় ধর্মগ্রন্থের সবচেয়ে শীর্ষস্থানীয় পণ্ডিত। উত্তরাধিকারসূত্রে এই জ্ঞান তাঁরা পেয়ে থাকেন ।

রক্তের প্লাটিলেট বৃদ্ধির উপায়

মক্বার এই বণিক কাফেলা এব পূর্বেও এই পথে বহুবার চলাচল করেছে। কিন্তু পাদ্রী বাহীরা এতোকাল পর্যন্ত কখনো তাদের সাথে কথা বলেননি এবং তাদের প্রতি ফিরেও তাকাননি। কিন্তু এই যাত্রায় কাফেলা পাদ্রীর গির্জার নিকটে অবতরণ করলে পাদ্রী তাদের জন্য খাবারের আয়োজন করেন ।

কাফেলার লোকজনের ধারণামতে, পাদ্রী গির্জায় বসে কিছু একটা লক্ষ্য করেই এমনটি করেছিলেন । তাদের ধারণা, পাদ্রী বাহীরা কাফেলার মাঝে রাসূলুল্লাহ(সা.)কে দেখে ফেলেছিলেন।  ফলে একখণ্ড মেঘ দলের মধ্যে থেকে কেবল রাসূলুল্লাহ (সা.) কে ই ছায়া দিচ্ছিল। কাফেলার লোকেরা আরও সামনে অগ্রসর হয়ে এক গাছের ছায়ায় অবস্থান নেয়।

তখন অলৌকিকভাবে গাছটি রাসূলুল্লাহ(সা.)র দিকে ঝুঁকে থাকে। পাদ্রী রাসূলুল্লাহ(সা.)কে মেঘের ছায়াদান ও গাছের ঝুকে থাকা লক্ষ্য করেন । এসব দেখে পাদ্রী গির্জা থেকে বের হয়ে আসেন । ( মহানবীকে ছায়াদানকারী সেই গাছটি আজও বেঁচে আছে যা সাহাবী গাছ নামে পরিচিত।)

মহানবীকে ছায়াদানকারী সাহাবী গাছ
মহানবীকে ছায়াদানকারী সাহাবী গাছ

এদিকে খাবার প্রস্তুত করা হয়। খাবারের দাওয়াত দিয়ে তিনি কাফেলার নিকট লোক প্রেরণ করেন। কাফেলার প্রতিনিধি হিসেব কয়েকজন লোক পাদ্রীর নিকট উপস্থিত হলে পাদ্রী বলেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায় ! আমি তোমাদের জন্য খাবারের আয়োজন করেছি। আমার একান্ত কামনা তোমরা প্রত্যেকে আমার এই আয়োজনে উপস্থিত হবে, ছোট-বড়, গোলাম-আজাদ সকলেই।

একজন বললো, আজ আপনি ব্যতিক্রম কিছু করছেন যা আগে কখনোই করেননি। অথচ এর আগেও বহুবার আমরা এই পথে যাত্রা করেছি। আজ এমন কী হলো হলো ?

পাদ্রী বলল,  ঠিক আছে তোমার কথা। ব্যপার তেমন কিছু নয়, তোমরা মেহমান, একবেলা খাইয়ে তোমাদের মেহমানদারী করতে আশা করেছিলাম আর কি!

কুরাইশ বণিক সকলেই পাদ্রীর নিকট সমবেত হলো। বয়সে ছোট হওয়ার কারণে রাসূলুল্লাহ(সা.) গাছের নিচে মালামালের নিকট থেকে যান ।পাদ্রী যখন দেখলেন যে, কাফেলার সব লোকই এসেছে, কিন্তু তিনি যে গুণ ও লক্ষণের কথা জানতেন তা কারো মধ্যে দেখা যাচ্ছে না ।

তখন তিনি বললেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায় ! আমার খাবার থেকে তঁমাদের একজনও যেন বাদ না যায় । লোকেরা বলল, হে বাহীরা, আপনার নিকট যাদের আসা উচিত তাদের একজনও অনুপস্থিত নেই। কেবল বয়সে ছোট একটি বালক তাঁবুতে রয়ে গেছে। পাদ্রী বলল, না, তা করো না, ওকেও ডেকে পাঠাও, যেন সেও তোমাদের সাথে এই খাবারে শরীক হতে পারে।

বর্ণনাকারী বলেন, এর জবাবে কাফেলার এক সদস্য বলে উঠলো, লাত-ওজ্জার শপথ! মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ এই খাবারে আমাদের মধ্যে অনুপস্থিত থাকাটা আমাদের জন্যও অনুচিত বটে। অতঃপর সে গিয়ে মুহাম্মদ সা.কে কোলে করে এনে সকলের সঙ্গে আহারে বসিয়ে দেয়।

পাদ্রী বাহীরা তাঁকে গভীর দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকেন এবং তাঁর দেহে সেসব লক্ষণ দেখার চেষ্টা করেন, যা তিনি তাঁর কিতাবে ইতোঃপূর্বে পেয়েছিলেন।

আহারপর্ব শেষে সকলে এদিক-ওদিক ছড়িয়ে পড়ল। এই সুযোগে পাদ্রী বাহীরা রাসূলুল্লাহ(সা.) এর কাছে গিয়ে বলল, “হে বালক ! আমি তোমাকে লাত-ওজ্জার শপথ দিয়ে জানতে চাচ্ছি, আমি তোমাকে যা জিজ্ঞেস করবো তার যথার্থ উত্তর দেবে কি ?” বাহীরা লাত-ওজ্জার নামে এই জন্যই কসম দিয়েছিলেন যে, তিনি মুহাম্মদ সা. এর সম্প্রদায়কে এই দুই নামে শপথ করতে অভ্যস্ত দেখেছেন ।

জবাবে, মুহাম্মদ সা. বললেন, আপনি আমাকে লাত-ওজ্জার নামে কিছুই জিজ্ঞেস করবেন না । আল্লাহর শপথ ! আমি এই দুটোর মতো অন্য কাউকে এতো ঘৃণা করি না ।বাহীরা বললেন, আল্লাহর শপথ ! আমি তোমাকে যা যা জিজ্ঞেস করবো তার যথার্থ উত্তর দেবে কি ?

মুহাম্মদ সা.বললেন, আপনার যা ইচ্ছে হয় জিজ্ঞেস করুন । বাহীরা তাঁকে তাঁর ঘুম, আকার-আকৃতি ইত্যাদি সব বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন । মুহাম্মদ সা. এক এক করে সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন ।

৫ম শ্রেণির সকল বিষয়ের প্রশ্ন ২০২৪

তাঁর প্রদত্ত সব বিবরণ বাহীরার পূর্ব থেকে জানা নবীর গুণাবলীর সাথে হুবহু মিলে যায়। তারপর বাহীরা তাঁর পিঠে দৃষ্টিপাত করে পূর্ব থেকে জানা বিবরণ অনুযায়ী তাঁর দু’স্কন্ধের মধ্যবর্তী স্থানে নবুওয়াতের মহর দেখতে পান ।

পাদ্রী বাহীরা এবার নবীজির চাচা আবু তালিবের দিকে ফিরে বললেন, এই বালক আপনার কী হয় ? আবু তালিব  বললেন, আমার পুত্র । বাহীরা বললেন, না, সে আপনার পুত্র নয়। এই বালকের পিতা জীবিত থাকতে পারে না । আবু তালিব বললেন, ও আমার ভাতিজা । পাদ্রী বললেন, ওর পিতার কী হয়েছে ? আবু তালিব বললেন, ও যখন তাঁর মাতৃগর্ভে তখন ওর পিতা মারা যান ।

পাদ্রী বাহীরা বললেন, ঠিক বলেছেন । ভাতিজাকে নিয়ে আপনি দেশে ফিরে যান । আর ওর ব্যপারে ইহুদিদের থেকে সতর্ক থাকবেন। আল্লাহর শপথ ! ইহুদিরা যদি ও কে দেখতে পায় আর আমি ওর ব্যপারে যা কিছু বুঝতে পেরেছি তা বুঝতে পারে, তাহলে ওরা ওর অনিষ্ট করে ছাড়বে। আপনার ভাতিজাটি ভবিষ্যতে বিশিষ্ট মর্যাদার অধিকারী হবেন । আপনি ওকে নিয়ে শীঘ্র দেশে ফিরে যান ।

অতঃপর আবু তালিব তাঁকে মক্কায় ফেরত পাঠান এবং বলেন, ‘হে আল্লাহ ! মুহাম্মদকে আমি আপনার হাতে সোপর্দ করলাম ।’ এরপর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আবু তালিব মুহাম্মদ সা.কে দেখাশুনা করেন । (তথ্য – আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ২য় খণ্ড)।

মহানবীর সিরিয়া সফর ও পাদ্রী বাহীরার কাহিনী মহানবীর অলৌকিক জীবন কাহিনীর একটি অংশ। এমন অগণিত অলৌকিক কাহিনী রয়েছে প্রিয় নবীজির জীবনের পাতায় পাতায়।

Samim Ahmed

Hey! I'm Samim Ahmed (Admin of ShikhiBD). I love to write and read on the topic of current affairs. Since my childhood; I have been an expert in writing feature posts for various magazines.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *