সুস্বাস্থ্যলেখাপড়া

লাল শাক চাষ পদ্ধতি । লালশাকের পুষ্টিগুণ

লাল শাক চাষ পদ্ধতি । লালশাকের পুষ্টিগুণ : আমাদের দেশে লালশাক একটি জনপ্রিয় শাক । বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকায় কম বেশি লালশাকের চাষ হয় । এতে প্রচুর ভিটামিন আছে ।

লালশাকের ছবি
লালশাকের ছবি

লাল শাক চাষ পদ্ধতি । লালশাকের পুষ্টিগুণ

লাল শাক চাষের সময়

লাল শাক একটি শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত হলেও বর্তমানে প্রায় সারাবছরই লালশাক চাষ করা হয়ে থাকে। বসতবাড়ির পাশে, আঙিনায় যত্নসহকারে জৈবসার প্রয়োগের মাধ্যমে লালশাক চাশ করলে সারাবছরই লালশাক পাওয়া যায়।

মাটি : প্রায় সব ধরনের মাটিতেই সারা বছর লালশাক আবাদ করা যায় । তবে দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটি চাষের জন্য উত্তম। আমাদের দেশে শীতের শুরুতে লালশাকের ফলন বেশি হয়। গরমকালে উঁচু জমিতে লালশাক চাষ করা যায় ।

লালশাকের জাত : লালশাকের অনেক জাত রয়েছে। তবে উন্নত দুটি জাত হলো- আলতাপাটি এবং বারি লালশাক-১। আলতাপাটি জাতটির পাতা ও কাণ্ড সিঁদুর লাল । বারি লালশাকের ১ পাতা ও কাণ্ড লাল হয়। এ শাকের ফুল লাল এবং বীজ গোলাকার হয় ।

জমি তৈরি : লালশাকের বীজ খুব ছোট। তাই ৪-৫টি চাষ ও ম‍ই দিয়ে জমি ঝুরঝুরা করে তৈরি করতে হবে। লালশাক একটি স্বল্পকালীন ফসল । তাই শেষ চাষের সময় প্রতি শতক জমিতে গোবর সার ৪০ কেজি, ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০০ গ্রাম টিএসপি এবং ২৫০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে । চারা গজানোর ৭ দিন পর শতকপ্রতি ৪০০ গ্রাম অতিরিক্ত ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে ।

যাকাত শব্দের অর্থ কি। যাকাতের খাত কয়টি। যাকাতের নিসাব কি ? বিস্তারিত জেনে নিন ।

বীজ বপন : লালশাকের বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে বপন করা যায় । সারিতে বপন করলে পরিচর্যা করা সুবিধাজনক এবং ফলনও বেশি হয় । বর্ষার সময় চাষ করলে এক মিটার চওড়া এবং ১৫ সেমি উঁচু বেড করে বীজ বপন করতে হয় । সেক্ষেত্রে দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেমি সেচ নালা রাখতে হয় । বপনের সময় বালির সাথে মিশিয়ে বপন করলে বীজ সব জায়গায় সমভাবে পড়তে পারে । প্রতি শতক জমিতে ১০ গ্রাম বীজ হলেই চলে । সারিতে বপন করলে, ২০ সেমি দূরে দূরে কাঠির সাহায্যে ১.৫-২.০ সেমি গভীর করে লাইন টেনে লাইনে বীজ ছিটিয়ে মাটি সমান করে দিতে হবে ।

আন্তঃপরিচর্যা : বীজ বপন বা চারা রোপণের পর থেকে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত যেসব পরিচর্যা করা হয়, তাকে আন্তঃপরিচর্যা বলে । বপনের সময় মাটিতে বীজ গজানোর মতো পর্যাপ্ত রস অর্থাৎ জো থাকলে সেচের প্রয়োজন হয় না । তবে জো না থাকলে বপনের পর পর জমিতে সেচ দিতে হবে । বীজ গজানোর এক সপ্তাহ পর প্রত্যেক সারিতে ৫ সেমি অন্তর গাছ রেখে অন্যান্য গাছ তুলে পাতলা করতে হবে । নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং সেচের পর মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে।

সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের নাম ও জীবন বৃত্তান্ত

ফসল সংগ্রহ : বীজ বপনের ২০-২৫ দিনের মধ্যে লালশাক সংগ্রহ শুরু করা যায় । প্রথম দিকে বড় গাছগুলো তুলতে হবে । এভাবে দুই-তিন দিন পর পর শাক তোলা যেতে পারে । শিকড়সহ লালশাকের গাছ তোলা হয় । তোলার পর পানিতে ধুয়ে আটি বেঁধে বাজারজাত করা হয় । কাণ্ড শক্ত হওয়ার আগেই শাকের জন্য ফসল সংগ্রহ শেষ করতে হবে ।

ফলন : উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতি শতক জমি থেকে ৪৫-৫৫ কেজি লালশাক পাওয়া যায় ।

লালশাকের পুষ্টিগুণ

প্রতি ১০০ গ্রাম লালশাকে রয়েছে –

জলীয় অংশ – ৮৮ গ্রাম

শক্তি – ৪৩ কিলোক্যালরি

কার্বোহাইড্রেট – ৫ মি.গ্রাম

প্রোটিন – ৫.৩ মি.গ্রাম

ভিটামিন সি – ৪৩ মি.গ্রাম

ক্যালসিয়াম – ৩৭৪ মি.গ্রাম

এছাড়াও রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ এবং আয়রন, ক্যারোটিন, পটাশিয়াম ইত্যাদি উপাদান ।

লালশাক খাওয়ার উপকারিতা

• লালশাক ভিটামিন এ সমৃদ্ধ। নিয়মিত খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

• ভিটামিন সির অভাবজনিত রোগ স্কার্ভি প্রতিরোধ করে।

• লালশাকের আঁশজাতীয় অংশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে।

• লালশাকে রয়েছে প্রচুর আয়রন। লালশাক শরীরে লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা বাড়ায়। তাই অ্যানিমিয়া রোগী এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য এ শাক খুবই উপকারী।

• নিয়মিত লালশাক খাওয়া হলে কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান শরীর থেকে বের হয়ে যায়।

• শরীরের টক্সিক উপাদান দূর করে এবং ক্যানসার কোষ উৎপন্ন হতে দেয় না ।

• লালশাকে থাকা ভিটামিন সি এবং কে দেহের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে। ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে।

• লালশাকের বিটা ক্যারোটিন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে।

• রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

• শরীরে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম জমে গিয়ে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হয়। সেগুলো প্রতিরোধ করে লালশাক।

পরিশেষে বলা যায়, লালশাকের পুষ্টিগুণ অপরিসীম। বসতবাড়িতে লালশাক চাষ করে সারাবছরই লালশাক চাষ করা যায়। লাল শাক খাওয়ার উপকারিতা সর্বজনবিদিত। লাল শাক চাষ পদ্ধতি । লালশাকের পুষ্টিগুণ : পোস্টটি সম্পর্কে আপনাদের মূল্যবান মতামত কমেন্টবক্সে জানাতে পারেন ।

Samim Ahmed

Hey! I'm Samim Ahmed (Admin of ShikhiBD). I love to write and read on the topic of current affairs. Since my childhood; I have been an expert in writing feature posts for various magazines.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *