ইসলামিক পোস্ট

হযরত সালমান ফারসির ইসলাম গ্রহণ এর কাহিনী

সালমান ফারসির ইসলাম গ্রহণ : হযরত সালমান ফারসি ছিলেন একজন বিখ্যাত সাহাবী। তিনি ছিলেন ইরানের ইস্পাহানের বাসিন্দা এবং পারসিক ধর্মাবলম্বী। বাল্যকাল থেকেই ছিল তাঁর সত্য ধর্ম গ্রহণের প্রতি প্রবল আগ্রহ।

জীবনের অধিকাংশ সময় তাঁর কেটে গেছে সত্য ধর্মের অনুসন্ধানে। মহান আল্লাহ্ তাঁকে কবুল করেছেন। তাঁর প্রচেষ্টাকে কবুল করেছেন । দীর্ঘ পথপরিক্রমা শেষে তাঁকে দান করেছেন সত্য ধর্মের অমিয় সুধা । আসুন আমরা তাঁর ইসলাম গ্রহণের বিস্ময়কর ঘটনা জেনে নিই :

হযরত সালমান ফারসির ইসলাম গ্রহণ এর কাহিনী

হযরত সালমান ফারসির ইসলাম গ্রহণের কাহিনী

হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রা. হযরত সালমান ফারসি রা. হতে বর্ণনা করেন। হযরত সালমান ফারসি রা. বলেন, আমি আমার পিতার জমি দেখার জন্য রওয়ানা হলাম।

খ্রিস্টানদের একটি গির্জার নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় গির্জার ভিতরে খ্রিস্টানদের আওয়াজ পেলাম । তখন তারা উপাসনা করছিল । শব্দ শুনে তাদের কর্মকাণ্ড দেখার জন্য আমি গির্জায় প্রবেশ করলাম ।

তাদের উপাসনা আমাকে মুগ্ধ করলো এবং আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। আমি মনে মনে বললাম, আল্লাহর শপথ ! আমরা যে ধর্মে আছি, এই ধর্ম তার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর। আল্লাহর কসম, তখন থেকে আমি তথায় সূর্যাস্ত পর্যন্ত ঠাঁয় দাড়িয়ে রইলাম । পিতার জমিজমার কথা একদম ভুলে গেলাম । ওখানে আর যাওয়া হলো না ।

তারপর আমি তাদের বললাম, এই দ্বীন আমি কোথায় পাবো ? তারা বলল, সিরিয়ায়। আমি পিতার নিকট ফিরে গেলাম। ততক্ষণে পিতা আমার অনুসন্ধানে লোক পাঠিয়ে দিয়েছেন এবং আমার চিন্তায় তার সব কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

আমি উপস্থিত হলে তিনি বললেন, বৎস ! তুমি কোথায় ছিলে ? আমি কি তোমাকে শীঘ্র ফিরে আসার কথা বলে দেই নি ?

সালমান ফারসি রা. বলেন, আমি বললাম, আব্বাজান ! যাওয়ার পথে আমি দেখলাম কিছু লোক কিছু লোক তাদের গির্জায় উপাসনা করছে ।

তাদের উপাসনা আমাকে মুগ্ধ করে । আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমি তাদের নিকটই দাড়িয়ে থাকি । পিতা বললেন, বৎস ! ঐ ধর্মে কোনো কল্যান নেই । তার চেয়ে তোমার ও তোমার পূর্বপুরুষদের ধর্মই উত্তম । আমি বললাম, কখনোই নয়। আল্লাহর কসম ! ঐ ধর্মাই আমাদের ধর্ম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

৬ মাস বাচ্চার খাবার তালিকা কি হওয়া উচিত? জানুন

সালমান ফারসি বলেন, এতে আমার পিতা আমাকে ভয় দেখান এবং পায়ে শিকল পরিয়ে আমাকে ঘরে আটকে রাখেন । আমি খ্রিস্টানদের নিকট খবর পাঠালাম যে, তোমাদের নিকট সিরিয়ার কোনো কাফেলা আগমন করলে আমাকে যেন অবহিত করা হয় । একসময় একটি কাফেলা আগমন করে ।

খ্রিস্টানরা আমার কাছে সংবাদ পাঠায় । আমি বললাম, কাজ শেষ করে যখন তাদের স্বদেশে ফিরে যাবার সময় হবে, তখন আমাকে একটু জানিয়ো। তিনি বলেন, তাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময় হলে খ্রস্টানরা আমাকে অবহিত করে। আমি পায়ের শিকল ভেঙে তাদের সঙ্গে রওয়ানা হলাম । এক সময়ে আমি সিরিয়া এসে পৌছালাম ।

সিরিয়া এসে আমি সেখানকার অধিবাসীদের জিজ্ঞেস করলাম, এই ধর্মের অনুসারীদের শ্রেষ্ঠ বিদ্বান কে ? তারা বলল, গির্জায় অবস্থানকারী প্রধান যাজক। আমি তার নিকট গিয়ে বললাম, আমি এই ধর্মের প্রতি আগ্রহী এবং আপনার সাহচর্যে থেকে গীর্জায় আপনার সেবা করতে চাই এবং আপনার নিকট থেকে জ্ঞান অর্জন করে আপনার সঙ্গে উপাসনা করতে চাই।

তিনি বললেন, ভিতরে প্রবেশ কর। আমি তার সঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করলাম । কিন্তু বুঝতে পারলাম, লোকটি অসৎ। সে তার অনুসারীদের সদকার আদেশ করে ও সেজন্য উৎসাহিত করে। কিন্তু প্রদত্ত সদকা সে নিজের জন্য কুক্ষিগত করে এবং গরিব-মিসকিনদের সে কিছুই দেয় না। এভাবে সে সাত মটকা সোনা-রূপা সঞ্চয় করে।

সালমান ফারসি রা. বলেন, এসব আচরণ দেখে তার প্রতি আমার মনে তীব্র ঘৃণার সঞ্চার হয় ।

উত্তর আমেরিকা মহাদেশের দেশসমূহের নাম, রাজধানী, মুদ্রা

কিংবদন্তি সালমান ফারসি (রা.) এর খৃষ্টান হওয়ার পরের ঘটনা

তারপর লোকটি মারা যায়। খ্রিস্টানরা তার কাফন-দাফনের উদ্দেশ্যে সমবেত হলে আমি তাদেরকে বললাম, ইনি তো অসৎ লোক ছিলেন। ইনি আপনাদেরকে সাদকা দেয়ার আদেশ করতেন এবং এজন্য উৎসাহিত করতেন বটে; কিন্তু আপনারা সদকা নিয়ে আসলে তা মিসকিনদের না দিয়ে সব নিজের জন্য রেখে দিতেন।

তারা আমাকে বলল, আপনি কী করে জানলেন ?

আমি বললাম, আমি আপনাদেরকে তার গোপন ধন-ভাণ্ডার দেখিয়ে দিচ্ছি। তারা বলল, ঠিক আছে দেখান। সালমান ফারসি রা. বলেন, আমি তাদেরকে তার গুপ্ত ধনভাণ্ডারের স্থানটি দেখিয়ে দিলাম।

তারা সেখান থেকে সাত মটকা ভর্তি সোনা-রূপা উদ্ধার করে। দেখে তারা বলল, আমরা একে দাফনই করবো না। তারা তাকে শূলে চড়ায় এবং প্রস্তরাঘাত করে। তারপর তারা অপর এক ব্যক্তিকে এনে তার স্থলে বসায় ।

সালমান ফারসি রা. বলেন, এই নতুন পাদ্রী রীতিমতো উপাসনা করেন। তার মতো দুনিয়ার প্রতি নির্মোহ, আখিরাতের প্রতি উৎসাহী এবং রাত-দিন ইবাদতগুজার আর কাউকে আমি দেখিনি । আমি তাকে ভালোবাসলাম, যেমন ইতোপূর্বে আর কাউকে আমি ভালোবাসিনি । বেশ কিছুদিন আমি তাঁর সহচর্যে আতিবাহিত করলাম ।

তারপর তাঁর মৃত্যুর সময় নিকটবর্তী হলে আমি তাঁকে বললাম, আমি আপনার সহচার্যে ছিলাম এবং আপনাকে আমি সর্বাধিক ভালোবাসতাম ।

এখন আল্লাহর নির্দেশে আপনার মৃত্যে এসে উপস্থিত হয়েছে। কাজেই আপনি আমাকে কার নিকট যাওয়ার অসিয়ত করছেন এবং আমাকে কী আদেশ দিচ্ছেন?

তিনি বললেন, আল্লাহর কসম ! আমি যে ধর্মের অনুসারী ছিলাম আজ সে ধর্মে তেমন কেউ আছে বলে আমার জানা খুব একটা জানা নেই । মানুষ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তার আদর্শ পরিবর্তন করে ফেলেছে। তবে মুসেলে অমুক নামের একজন লোক আছেন । তিনিও আমার ধর্মের অনুসারী। তুমি তার সঙ্গে গিয়ে মিলিত হও ।

সালমান ফারসি রা. বলেন, তাঁর মৃত্যু ও দাফন-কাফনের পর আমি মুসেলের উপরোল্লিখিত লোকটির  সঙ্গে গিয়ে মিলিত হলাম।

বললাম, জনাব ! অমুক ব্যক্তি মৃত্যুর সময় আমাকে আপনার সঙ্গে মিলিত হওয়ার ওসীয়ত করে গেছেন এবং আমাকে অবহিত করে গেছেন যে, আপনি তাঁরই ধর্মের অনুসারী । তিনি বললেন, ঠিক আছে তুমি আমার নিকট অবস্থান কর্ । আমি তাঁর নিকট অবস্থান করলাম । তাঁকে আমি তাঁর ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত উত্তম ব্যক্তি হিসেবে পেয়েছি ।

কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু ঘটে । মৃত্যুকালে আমি তাঁকে বললাম, জনাব ! অমুক তো আপনার সান্নিধ্যে আসার জন্য আমাকে অসিয়ত করেছিলেন । এখন আল্লাহর হুকুমে আপনার মৃত্যুকাল উপস্থিত । আপনি আমাকে কার কাছে যাওয়ার উপদেশ দিচ্ছেন ?

তিনি বললেন, বৎস ! আমরা যে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলাম, সে দ্বীনের উপর আর কেউ প্রতিষ্ঠিত আছে কিনা জানিনা । তবে তুমি নাসীবীনে অমুক নামের একটি লোক আছে , তার কাছে যাও ।

তারপর যখন তিনি মারা গেলেন এবং দাফন-কাফনের কাজ শেষ হলো, তখন আমি নাসীবীনের লোকটির সঙ্গে মিলিত হলাম এবং তাঁকে আমার নিজের ইতিবৃত্ত ও আমার পূর্বের দুই সঙ্গী যা বলেছেন তা তাঁর নিকট ব্যক্ত করলাম ।

ঠিক আছে তুমি আমার নিকট অবস্থান কর। আমি তাঁর নিকট অবস্থান করলাম। তাঁকেও আমি তাঁর পূর্বের দুই উত্তরসূরীর ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত পেয়েছি। কিন্তু আল্লাহর শপথ করে বলছি, কিছুদিন না যেতেই তাঁরও মৃত্যু ঘনিয়ে এলো।  

আমি তাঁকে আমার পূর্বের বৃত্তান্ত বর্ণনা করে বললাম, জনাব ! আপনি আমাকে কার সান্নিধ্য অবলম্বনের উপদেশ দেবেন এবং আমাকে কী আদেশ দেবেন ?

বললেন, বৎস ! তুমি রোমের আমুরিয়া নামক স্থানে একজন লোক আছেন তুমি তাঁর নিকট যেতে পারো। কারণ তিনিও আমাদের অভিন্ন পথের যাত্রী।

যখন তিনি মারা গেলেন এবং দাফন-কাফন সম্পন্ন হলো, আমি সেই ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাত করলাম এবং আমার জীবন বৃত্তান্ত শোনালাম।

তিনি বললেন, ঠিক আছে তুমি আমার নিকট থাকো। আমি এবারও এমন ব্যক্তির সঙ্গে অবস্থান করতে শুরু করলাম যনি আমার পূর্বের গুরুদেরই ধর্মের শ্রেষ্ঠতম মানুষ ছিলেন।

সালমান ফারসি রা. বলেন, এসময়ে আমি কিছু উপার্জন করি । কয়েকটি গাভী ও ছাগল আমার মালিকানায় আসে। কিছুদিন অতিবাহিত হবার পর তাঁরও মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে। আমি তাঁর কাছে অসিয়ত চাইলাম, তিনি বললেন, বৎস ! আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি! আমার জানামতে আমাদের পথের যাত্রী একজন লোকও বেঁচে নেই্, আমি তোমাকে যার নিকট যেতে বলতে পারি।

তবে এমন একজন নবীর আবির্ভাবকাল ঘনিয়ে এসেছে, যিনি ইবরাহিমের ধর্মসহ প্রেরিত হবেন । আরব ভূমিতে তাঁর আবির্ভাব হবে এবং খেজুর বীথি বেষ্টিত ভূমি হবে তাঁর হিজরত স্থল। তাঁর প্রকাশ্য কিছু লক্ষণ থাকবে । তিনি হাদিয়া গ্রহণ করবেন কিন্তু সদকা খাবেন না । তাঁর দুই কাঁধের মাঝে থাকবে নবুওয়াতের মোহর। সম্ভব হলে সেই দেশে গিয়ে তুমি তাঁর সঙ্গে মিলিত হও।

সালমান ফারসি রা. বলেন, তারপর তিনি মৃত্যুবরণ করেন ও তাঁর দাফন-কাফন সম্পন্ন হয়। আমি আরও কিছুকাল আমুরিয়ায় অবস্থান করি। তারপর আমি একটি বণিক কাফেলার সাক্ষাত পেয়ে তাদের বললাম, তোমরা আমাকে আরব ভূমিতে নিয়ে যাও, বিনিময়ে আমি তোমাদেরকে আমার এই গাভী ও ছাগলগুলো দিয়ে দেবো। তারা বলল, ঠিক আছে চলো। আমি তাদের সাথে রওয়ানা হই।

কিন্তু ওয়াদিউল কুরায় পৌছে  তারা আমার প্রতি জুলুম করে। আমাকে তারা এক ইহুদির নিকট দাসরূপে বিক্রি করে দেয় । আমি দাস হিসেবে তার নিকট থাকতে শুরু করি। এ জায়গায় খেজুর বৃক্ষ দেখে আমি আশান্বিত হলাম যে, আমার গুরু আমাকে যে নগরীর কথা বলেছেন এটাই সম্ভবত সেই নগরী।

আমি আমার মনিবের কাছে থাকছি। এ সময়ে বনু কুরায়জা বংশীয় তার এক চাচাতো ভাই মদিনা থেকে এসে আমাকে আমার মনিব থেকে কিনে মদিনায় নিয়ে যায় । আল্লাহর কসম ! মদিনাকে দেখামাত্রই আমি বুঝে ফেললাম, এটাই সেই নগরী আমার গুরু আমাকে যার কথা বলেছিলেন। আমি মদিনায় অবস্থান করতে থাকি।

ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আবির্ভাব হয়ে গেছে। তিনি কিছুকাল মক্কায় অবস্থান করেন । গোলামী জীবনের ব্যস্ততার কারণে আমি তাঁর কোনো আলোচনা শুনতে পারছিলাম না । তারপর তিনি মদিনায় হিজরত করে কুবা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন ।

আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, একদিন আমি আমার মনিবের খেজুর গাছের কাঁদি কাটার কাজ করছিলাম । মনিব তখন নিচে উপবিষ্ট । এমন সময় তার এক চাচাতো ভাই এসে তাকে বলে, আল্লাহ বনু কায়লার অমঙ্গল করুন। তারা এখন কুবায় এমন এক ব্যক্তিকে দেখার জন্য ভীড় জমিয়ে আছে, যিনি আজই মক্কা থেকে এসেছেন এবং নিজেকে নবী বলে দাবী করছেন।

সালমান ফারসি রা. বলেন, একথা শোনা মাত্র আমার শরীরে কাঁপন ধরে গেল। আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন গাছ থেকে মনিবের গায়ের ওপর পড়ে যাবো। আমি গাছ থেকে নিচে নেমে মনিবের চাচাতো ভাইকে বললাম, আমি কী কী যেন বলছিলেন ?

সালমান ফারসি রা. বলেন, আমার কৌতূহলপূর্ণ প্রশ্ন শুনে মনিব আমার গালে কষে এক চড় বসিয়ে দেয় এবং বলে, ও কী বলেছে তাতে তোর কী ? যা তুই তোর কাজ কর গে।

সালমান ফারসি রা. বলেন, আমার নিকট কিছু সম্পদ সঞ্চিত ছিল। সন্ধ্যাবেলা আমি সেগুলো নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সা. এর কাছে গেলাম । তিনি তখন কুবায়। নিকটে গিয়ে আমি তাঁকে বললাম, আমি জানতে পেরেছি, আপনি একজন পুণ্যবান ব্যক্তি।

আপনার সঙ্গে যারা আছেন তাঁরা গরিব অসহায়। এই জিনিসগুলো সদকা দেয়ার উদ্দেশ্যে আমি সঞ্চয় করেছিলাম। আমি দেখলাম যে, অন্যদের তুলনায় আপনারাই অধিক হকদার। এই বলে আমি জিনিসগুলো তাঁর দিকে এগিয়ে দিলাম। তিনি তাঁর সঙ্গীদের বললেন, তোমরা খাও এবং নিজে হাত গুটিয়ে নিলেন, খেলেন না । আমি মনে মনে বললাম, এই একটি প্রমাণ পেলাম ।

তারপর আমি ফিরে গেলাম এবং আরো কিছু জিনিস সংগ্রহ করলাম। ততদিনে মহানবী (সা.) মদিনায় চলে গেছেন। আমি আবারও তাঁর নিকট গেলাম এবং বললাম, আমি লক্ষ্য করলাম আপনি সদকা খান না।

তাই আপনার সম্মানার্থে এগুলো আপনার জন্য হাদিয়া। সালমান ফারসি রা. বলেন, মহানবী (সা.) জিনিসগুলো হাতে নিয়ে নিজে কিছু খেলেন এবং সাহাবীদের খেতে আদেশ দিলেন । আমি মনে মনে বললাম, এই দ্বিতীয় প্রমাণ পেলাম ।

এরপর আরেকদিন আমি মহানবীর (সা.) খেদমতে উপস্থিত হলাম। তিনি বাকিউল গারকাদ গোরস্থানে জনৈক ব্যক্তির জানাজা উপলক্ষ্যে সাহাবী পরিবেষ্টিত অবস্থায় বসে আছেন । তাঁর পরনে ও গায়ে মোট দুটো চাদর। আমি তাঁকে সালাম দিয়ে তাঁর পিছন দিকে গিয়ে আমার গুরুর বর্ণনা মোতাবেক তাঁর পিঠে মোহর আছে কিনা দেখতে লাগলাম ।

দেখে রাসূলুল্লাহ্ সা.বুঝে ফেললেন যে আমি কিছু একটা অনুসন্ধান করছি। ফলে তিনি নিজ পিঠ হতে নিজের চাদর সরিয়ে ফেললেন।

মোহরের প্রতি চোখ পড়া মাত্রই আমি যে তা মোহরে নবুওয়াত তা বুঝে ফেললাম। দেখেই আমি তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম এবং তাঁকে চুমু খেতে খেতে কাঁদতে লাগলাম। দেখে রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, এদিকে এসো। পেছন থেকে ফিরে আমি রাসূলুল্লাহ সা. এর সামনে আসলাম এবং আমার কাহিনী শোনালাম। শুনে রাসূলুল্লাহ সা. মুগ্ধ হলেন ।

অবশেষে তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে ইসলামের জন্য জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করে গেছেন । ইসলামে হযরত সালমান ফারসির অবদান এর কথা, সালমান ফারসির কাহিনী ইতিহাসের পাতায় চির অম্লান হয়ে আছে। ( তথ্যসূত্রঃ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ২য় খণ্ড)।

Samim Ahmed

Hey! I'm Samim Ahmed (Admin of ShikhiBD). I love to write and read on the topic of current affairs. Since my childhood; I have been an expert in writing feature posts for various magazines.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *